অনেক মানুষ আছে যারা ভালো একটা কর্ম সন্ধানের জন্য বিদেশে পাড়ি জমায়। মা বাবার স্বপ্ন থাকে তাদের সন্তানের একটা ভালো ভবিষ্যৎ হোক। তবে সবার আসার পূরণ হয় না। নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল কারা জন্য পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলো আবুল বাশার। ঘটনার বিবরণে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানায়, ছেলেকে বিদেশ পাঠানোর জন্য পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার পর মাত্র একটি কিস্তি পরিশোধ করেছি।
এখন বাকি কিস্তি কি করে দিমু মাথায় কাজ করে না। আমরা গরীব মানুষ। দিন এনে দিন খায়। সব মিল্লা ধর-দেনা কইরা পোলাদার বিদেশ পাঠায়। আর আমি অহন পোলার লাশের জন্য অপেক্ষা করছি।
কথাগুলো বলেছেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার খালু মোস্তফা মিয়া (২১) সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাদ্দাম হোসেন (২১)। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দেশের আল কাসিম শহরে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে কুমিল্লার তিন যুবকের মৃত্যু হয়। তাদের একজন মনোহরগঞ্জ উপজেলার নরহরিপুর গ্রামের আবুল বাশারের ছেলে সাদ্দাম।
স্বজনরা জানান, ছোটবেলায় সাদ্দামের বাবা মারা যান। এরপর তাকে ও তার ছোট ভাই হৃদয়কে বড় করেন খালু মোস্তফা মিয়া। তিনি তাদের নিজের সন্তানের মতো মানুষ করেছেন।
সাদ্দামের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেললেন মোস্তফা মিয়া। কাঁদছিলেন সাদ্দামের মা খোদেজা বেগম ও বোন শিরিন আক্তার।
মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘সাদ্দাম পাঁচ বছর আগে বিদেশে গিয়েছিলেন। এরপর থেকে ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। এরপর তার ভাই হৃদয়কে নিয়ে যায়। এর মধ্যেই হৃদয়ের কাগজপত্রের মেয়াদ শেষ। তাই কাগজপত্র ঠিক করতে গত মাসের আগের মাসে বাড়ি থেকে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছিলেন তিনি। আমরা একটি এনজিও থেকে এই টাকা ধার করেছি। আমি ঋণের মাত্র একটি কিস্তি পরিশোধ করেছি। এখন এত টাকা কিভাবে দিব বুঝতে পারছি না। সরকার না দেখলে আমাদের জীবন ছাড়া কিছুই দেওয়ার নেই।
মোস্তফা মিয়া জানান, তার ছোট ভাই হৃদয় এবং একই দুর্ঘটনায় নিহত ফারুক ও পারভেজের বাবা আবুল কাশেম সাদ্দামের মরদেহ দেশে আনতে সহযোগিতা করছেন।
কুমিল্লা জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক দেবব্রত ঘোষ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, “তাদের পরিবার সরকারের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা পাবে। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে তিন মাস সময় লাগবে। আমরা এনজিওর সঙ্গে কথা বলে সমন্বয় ও সহযোগিতা করতে পারি। যা তারা ঋণ নিয়েছে। এছাড়া তারা আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমি অবশ্যই তাদের পাশে থাকব।
আবুল বাশারের ছেলে প্রয়াত সাদ্দামকে এখনো দেশে আনা হয়নি। দুর্ঘটনার পর তাকে ওই খানকার একটি স্থানীয় হাসপাতালে রাখা হয়েছে। দেশটির পুলিশ ও ডাক্তারি ভেরিফিকেসন শেষ হলে তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে বলে সংবাদ সূত্রে জানা যায়।