বাংলাদেশে অনেক দেশদ্রোহীর সাজা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে অনেকে এখনো মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশকে রসাতলে দেওয়ার জন্য দূর থেকেই তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে কাজ সুরু করেছিল তা ধীরে ধীরে পূরণ হতে চলেছে। তবে অনেক দেশদ্রোহীর ষড়যন্ত্রের জন্য এক পা এগিয়ে আবার পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে এমনি মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারকে হ/ ত্যার ষড়যন্ত্রের পেছনে অনেক কিছুই জানি। তবে তিনি নিজেই ‘নীল কণ্ঠ’ হিসেবে বেঁচে আছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন: ‘আমি অনেক কিছু জানি, বলতে পারি না, বলতে পারি না। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আমার একমাত্র লক্ষ্য। যখন আমি স্বার্থপরভাবে এটি করতে পারি, তখন আমি অনেক কিছু বলার সুযোগ পাব।
বুধবার (৩১ আগস্ট) জাতীয় সংসদে ১৪৭ ধারার ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য রাম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর উপস্থাপিত প্রস্তাবটি পরবর্তীতে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও ২৪ জন সংসদ সদস্য অংশ নেন।
মোক্তাদির চৌধুরীর প্রস্তাব ছিল: এই মহান সংসদের অভিমত যে, বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের নি/র্মমভাবে হ/ ত্যাকারী ঘৃণ্য খু/ নি ও ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি আমরা আমাদের গভীর ঘৃণা প্রকাশ করছি। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের ভূত এখনো শান্ত হয়নি। আজও তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ফিরে ইতিহাসের চাকা ঘোরাতে তাদের ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ঘৃণ্য চক্রান্ত সফল হতে পারে না। ইতিহাসের পাদদেশে দাঁড়িয়ে বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সকল শহীদদের বিনম্র চিত্তে স্মরণ করছি এবং বঙ্গবন্ধুর সর্বকনিষ্ঠ নেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সকল চক্রান্ত নস্যাৎ করার অঙ্গীকার করছি। ২০২২ সালের আগস্টে ১১ তম জাতীয় সংসদের ২৯ তম অধিবেশনে প্রত্যয় দৃঢ়।
বঙ্গবন্ধু হ/ ত্যাকাণ্ডের নেপথ্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ/ ত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িতদের বিচার করা হয়েছে। অনেক সাজা কার্যকর করা হয়েছিল। কিন্তু এই ষড়যন্ত্র শুধু হ/ ত্যা নয়। আমাদের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। এই চক্রান্ত আমার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে। এই চক্রান্ত আমাদের আদর্শ। এই চক্রান্তের পিছনে কারা রয়েছে তা খুঁজে বের করার সময় এসেছে। এই হ/ ত্যার ষড়যন্ত্রকারীদের বের করে জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। আমরা কি শেষ করতে পারি? আমি মনে করি একদিন না একদিন এটি অবশ্যই বেরিয়ে আসবে, একদিন না একদিন এটি অবশ্যই প্রকাশিত হবে। অবশ্যই জাতিকে জানতে হবে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম জানতে হবে। ষড়যন্ত্র আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করছিল। এটা রাষ্ট্রের ক্ষতি করছিল। অবশ্যই জাতির জানা উচিত।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এই হ/ত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত তা পরিষ্কার। তবে হ্যাঁ, আমি অনেক কিছু জানি। কিন্তু আমি বলেছিলাম: সমস্ত ব্যথা, বেদনা, আমার বুকে। আমি নীল কন্ঠে হয়ে বেঁচে আছি। আমি অনেক কিছু জানি, আমি বলতে পারি না, আমি বলি না। কারণ আমার একটাই লক্ষ্য: আমি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই। যখন আপনি লাভের সাথে পারেন তখন এটি করুন। তখন অনেক কিছু বলার সুযোগ পাব।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের জন্য কাজ করতে তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন। আমি এটা নিয়ে ভাবিনি। গ্রামাঞ্চলে ফিরে যাওয়ার অনুভূতি আমার মনে ছিল। এদেশের মানুষের জন্য আমাকে কিছু করতে হবে। অন্যায় দূর করতে হবে। অন্যায়ের সংস্কৃতি দূর করতে হবে। একদিকে খু/নিদের বিচার, অন্যদিকে শোষিত-বেসরকারি ব্যক্তিদের আমার বাবার অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করতে হবে।
এই যাত্রা সহজ ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বারবার আঘাত ও মৃ/ ত্যু হয়েছে। আল্লাহ আমাকে এই শক্তি দিয়েছেন, আমি ভয় পাইনি। একটা বিশ্বাস ছিল যে একদিন মরে যাবে। আমি মরার আগে মরতে রাজি ছিলাম না। আমি আমার সংগ্রাম চালিয়ে গেলাম। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি। ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভুল তথ্যের অভিযোগ তুলে সরকারপ্রধান বলেন: “দুর্ভাগ্যবশত, আমি যতই কিছু করি না কেন, কিছু লোক রয়ে গেছে। তারা মোটেও ভালো নেই। তারা মিথ্যা অপপ্রচার করবে। যদিও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বারবার বলছে: না, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক বিপদে নেই। সেখানে আমাদের দেশে কিছু মানুষ ভুল তথ্য ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ সম্মানিত হলেও আমাদের ভেতরে কিছু মানুষ বাংলাদেশকে অসম্মান করার জন্য মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে পনেরই আগস্টের স্বাধীনতাবিরোধী ভূত এখনো সক্রিয়।
বঙ্গবন্ধুর খু/নিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আত্মস্বীকৃত খু/ নিদের মধ্যে যারা দেশে ছিল তাদের বিচার করেছি। আমরা বিদেশ থেকে তিনজনকে আনতে পেরেছি। কর্নেল নূর কানাডায়, রাশেদ চৌধুরী আমেরিকায়, রশিদ লিবিয়া, পাকিস্তানে থাকেন। আমরা চেষ্টা করছি. তারা আমাদের মানবাধিকারের কথা শোনে। এবং খু/নিদের লালন-পালন করে; এটা দুর্ভাগ্য। তবে এ বিষয়ে আমাদের প্রচেষ্টা রয়েছে।
জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর খু/নিদের আশ্রয় দিয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি সবাইকে নিয়ে রাজনীতি করছি। আমি কারো বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিইনি। আমি বিচারে বিশ্বাস করি। আমি বিচারের মধ্য দিয়ে গিয়েছিলাম। আমার ইচ্ছা প্রতিশোধ নেওয়ার নয়, দেশের মানুষের জন্য কাজ করা। আমার বাবাকে হ/ ত্যা করে যাদের ভাগ্য বিঘ্নিত হয়েছিল তাদের ভাগ্য পরিবর্তন করতে; তাদের একটি সুন্দর জীবন দিতে; ওইটা আমার লক্ষ. সেই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছি। পরপর তিনবার ক্ষমতায় থাকার পর অন্তত কিছু কাজ করতে পেরেছেন। যার সুফল দেশের মানুষ পাচ্ছে। দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে সে ব্যবস্থা করার সুযোগ পেয়েছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি কিন্তু করোনাভাইরাস থেকে দুই বছরের ক্ষতি করতে পারি। তারপর এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ; এটাই আমাদের বাধা দিচ্ছে। জানি না এই যুদ্ধ শেষ হবে কিনা।
বর্তমানে দেশে অনেক রাজনৈতিক দল অযোগ্যতা সৃষ্টি করার চক্রান্ত করছে আমরা তা কোন ভাবেই সফল হতে দিব না বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি নিজের আওয়ামী লীগের কিছু অসাধু নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আমি জানি অনেক আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের ক্ষমতা দেখিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে অবিচার করছে। তাদের একটা কথা বলে রাখি আওয়ামী লীগ করেও ক্ষমা পাওয়া যাবে না। আওয়ামী লীগ কোন সন্ত্রাসী দল নয় তাই সতর্ক হন সবাই। অপরাধী যে দলের হোক অন্যায় করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই।