নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর বাকি রয়েছে ১০ দিন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী প্রচারণায় নির্বাচনের মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। এই নির্বাচনে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং তৈমুর আলম খন্দকার। এই দুজনের মাঝে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হলেও একটি ছায়া আলোচনায় রয়েছে সরকারি দলের এমপি শামীম ওসমান। তিনি ভোটের মাঠে কোথাও নেই, কিন্তু ছায়া হিসেবে রয়েছে তার নীরব উপস্থিতি। নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর সাথে তার যে একটি দীর্ঘ সময়ের দ্বন্দ্ব সে বিষয়টিও নিরবে উঠে আসছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারের সাথে ভেতরে ভেতরে এমপি শামীম ওসমানের সমর্থন রয়েছে এমন একটি গুঞ্জন ছড়িয়ে রয়েছে নগরীতে। তাই সেখানকার রাজনীতিতে বিশিষ্ট জনেরা বলছেন শামীম ওসমান নির্বাচনে সরাসরি নেই কিন্তু তার ছায়া রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, এখন এত মুখোশ পরা মানুষ, এত নেকাব পরা মানুষ, সেই মুখোশের অন্তরালে লুকিয়ে থাকা বীভ’ৎস চেহারা যখন দেখি তখন আত’/ঙ্কিত হই। আমরা দেখেছি বঙ্গবন্ধু যেদিন দেশে ফিরে এসেছিলেন তখন বেঈমান মোশতাক কী সুন্দর কান্না করছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন তাজউদ্দীন চান নাই আপনি দেশে ফিরেন। সেই মুখোশ পরা লোকগুলি আমাদের আশেপাশেই আছে।
তিনি বলেন, অনেক কিছুই দেখছি, অনেক কিছুই শুনছি। অনেক কিছুই বলার আছে। সময় হলে সব কিছুর জবাব দেওয়া হবে। বুধবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অভিষেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন তিনি। নগরীর পুরাতন কোর্ট এলাকায় অবস্থিত পাবলিক লাইব্রেরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
শামীম ওসমান বলেন, সততার কোনো রূপ বা চেহারা যদি থাকে সেটি হলো আমার নেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা। আমি সৎ মানুষগুলোকে বেশি ভালোবাসি কারণ আমি একজন সৎ মানুষের ঘরে জন্মেছি। আমার দাদা খান সাহেব ওসমান আলী ১৯২২ সালে রোলস রয়েস গাড়ি কিনেছিলেন। আমার প্রয়াত বড় ভাই নাসিম ওসমানের বিয়ের রাতে ছিলেন প্রয়াত শেখ কামাল। বঙ্গবন্ধুকে হ’/ত্যার পর নববধূকে রেখে আমার ভাই নাসিম ওসমান চলে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে।
তিনি বলেন, আমার বাবা একেএম সামসুজ্জোহাকে খুনি মোশতাক তার মন্ত্রী পরিষদে যোগ দিতে বলেছিল কিন্তু তিনি তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং গ্রেফতার হয়েছিলেন। আমরা ১ বেলা খেয়েছি, ৯শ টাকার জন্য কলেজে ফরমফিলাম করতে পারিনি। আমার বাবা একটি টাকাও রেখে যাননি ।
শামীম ওসমান বলেন, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হ’/ত্যার পর জাতীয় চার নেতাকে হ’/ত্যার সময় আমার বাবাও সেখানে জেলখানায় ছিলেন। শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী চাচাকে ওজুও করতে দেয়া হয়নি। সেদিন তারা বলেছিলেন, আমাদের হ/’ত্যা করো আমরা ম’রেও প্রমাণ করতে চাই আমরা শেখ মুজিবের লোক ছিলাম। সেই রকম সৎ লোকগুলোর বড় অভাব এখন।
শামীম ওসমান বলেন, আমি রাজনীতি করি মানুষকে ভালবেসে, ইবাদত হিসেবে। ১৬ জুন বোমা হামলায় আমার ২০ জন লোক মা’/রা গেছে। আমার চন্দন শীলের পা নেই তিনি এখনও ইনস্যুরেন্স কোম্পানিতে কাজ করে খান। কোনো ধান্দাবাজি করেন না। এতেই আমার গর্ব লাগে। বো’/মা হামলায় আমি রক্তের মধ্যে শুয়েও বলেছিলাম, আপনারা শেখ হাসিনাকে বাঁচান। আমরা ওই রকমের রাজনীতিই করি।
শামীম ওসমান এসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন শেখ রেহানা তার বুকে হিমালয়সম কষ্ট চেপে আছেন। তিনি নিজের নামে কোনো স্থাপনা তো দুরে থাক একটি গাছও লাগাতে দেননি। আমি ডিও লেটার দিয়েছিলাম শেখ রেহানার নামে নারায়ণগঞ্জে একটি মেডিকেল কলেজ হোক। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন শেখ রেহানাকে রাজি করাও। উনি দয়া করে , স্নেহ করে সেই অনুমতি দিয়েছিলেন। নারায়ণগঞ্জে শেখ রেহানা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হচ্ছে।
শামীম ওসমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেয়ার সময় নতুন প্রজন্মের যুবক এবং তরুণদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তোমরা আগামী প্রজন্মের কর্ণধার। তোমাদের ভালো কিছু করতে হবে। তোমরা তোমাদের বাবা মার প্রতি দায়িত্ববান হবে। যে সন্তান তার পিতা মাতার প্রতি যত্নশীল ও দায়িত্ববান, সে সন্তান জীবনের সফলতা অবশ্যই দেখতে পারবে। আর তোমাদের কারণে যদি তোমাদের বাবা মাকে কেউ অপমান করে থাকে, তবে তোমরা যদি তার প্রতিবাদ নাও করতে পারো, তবে ওই অপমানকারী ব্যক্তি যারা তাদের সাথে কখনো কোনো বিষয়ে আপোষ করতে যাবে না। তাহলে একসময় তুমি অনুশোচনায় পতিত হবে, নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না।