লালমনিরহাটের আদিতামারী মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রভাষক জাহাঙ্গীর আলম শাহীন অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে প্যান্টের বেল্ট ও চেন খুলে অধ্যক্ষের সামনে অশালীন আচরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ঘটনার ৩৭ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ৩৭ সেকেন্ডের ভিডিওটি রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হলে মহিষ খোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং শাস্তিসহ শিক্ষকের অপসারণের দাবি জানায়।
ভিডিওতে দেখা যায়, উত্তেজিত কলেজ শিক্ষিক শাহীন তার বেল্টের বোতাম খুলে অধ্যক্ষেকে উদ্দেশ্যে জরে নানা কথা বলছেন। অধ্যক্ষের কক্ষে কয়েকজন শিক্ষকের সামনে অশালীন আচরণ করেন। তবে অধ্যক্ষের কক্ষে থাকা অন্য শিক্ষকরা তাকে এ কাজে বাধা দেন। পরে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে সেখান থেকে চলে যান।
জাহাঙ্গীর আলম শাহীন মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সচিবালয় ও অফিস ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক। রোববার দুপুরের দিকে অধ্যক্ষ শরওয়ার আলমের কক্ষে তিনি এ কান্ড ঘটান। জানা গেছে, রোববার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে কলেজে আসেন জাহাঙ্গীর আলম শাহীন। অথচ সকাল নয়টায় আসার কথা শিক্ষক-কর্মচারিদের। পরে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে সই করার জন্য হাজির খাতা চান ওই শিক্ষক। এসময় তাকে অধ্যক্ষ শরওয়ার আলম বলেন, ‘আপনি যতটার সময় এসেছেন ততটার সময় সই করেন।’ এতে রেগে গিয়ে প্যান্টের চেইন খোলার ঘটনা ঘটান তিনি। এ ঘটনার এসময় আরও কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারি উপস্থিত ছিলেন সেখানে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সহকারী শিক্ষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘কলেজ আগমনের টাইম অনুযায়ী হাজিরা খাতায় সই করতে বলায় রেগে যান শাহীন স্যার। এরপর বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে নিজের প্যান্টের চেইন খুলতে থাকেন তিনি। পরে আমিসহ বাকিরা তাকে এ কাজে নিবৃত করলে তিনি অফিস থেকে বেরিয়ে যান।
ওই প্রতিষ্ঠানের ক্রীড়া শিক্ষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘ঘটনার সময় শাহীন প্যান্টের বেল্ট ও হুক খুলে ফেলেন। একপর্যায়ে তিনি চেইন খোলার চেষ্টার পাশাপাশি পিন্সিপ্যাল স্যারকে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন।’ প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষক একরামুল হক বলেন, শিক্ষকরা যদি শিক্ষার্থী স্কুলে থাকা অবস্থা এমন করেন তাহলে শিক্ষার্থীরা কি শিখবে তাদের কাছে।
জাহাঙ্গীর আলম শাহীন এটা চরম অন্যায় করেছেন। ফলে তাকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে সিনিয়র প্রভাষক ড. জাহাঙ্গীর আলম শাহীন বলেন, একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে আমাকে চাকরিচ্যুত করার জন্য আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে। পুরো অডিও-ভিডিও প্রকাশ করা হোক এবং আমার অপরাধ প্রমাণিত হলে আমাকে শাস্তি দেওয়া হবে।
অধ্যক্ষ শরওয়ার আলম বলেন, ‘রবিবার আমার কক্ষে জাহাঙ্গীর আলম শাহীনের আচরণ খুবই লজ্জাজনক। সবার সঙ্গে কথা বলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ আগস্ট অধ্যক্ষ শরওয়ার আলম বিনা কারণে ক্লস না করানোর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে শাহীনতে। গত ২০ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিনি বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত থেকে প্রতিষ্ঠানের শৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত করেছেন বলে জানা গেছে। যা সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী। এছাড়াও আপনি ক্লাসে উপস্থিত হন না যদিও প্রতিদিনের ক্লাস রুটিনে ক্লাস থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ দর্শানোর নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে হাজির না হলে নিয়ম অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এর উত্তর না দিয়ে আজ এ ঘটনা ঘটিয়েছে।