অধিক মুনাফার লোভে রাজশাহীর লাখ লাখ মানুষ গত কয়েক বছরে অনলাইন অ্যাপে বিনিয়োগ করে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। বিদেশি অ্যাপের নামে শুধু রাজশাহী অঞ্চল থেকেই হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পালিয়েছে প্রতারক চক্র।
এ পর্যন্ত রাজশাহীর বিভিন্ন থানায় এসব অ্যাপ অপারেটরদের বিরুদ্ধে অনলাইন প্রতারণার ২৪টি মামলা হয়েছে। সেসব মামলার আসামিরা টাকা লুট করে কেউ কেউ দুবাই বা মালয়েশিয়ার মতো দেশে গিয়ে সহজ জীবনযাপন করেন।
এসব প্রতারক চক্রের মূল হোতাদের কাউকেই এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এরই মধ্যে গত ১৮ জানুয়ারি আরএমপির রাজপাড়া থানায় অনলাইন জালিয়াতির আরেকটি নতুন মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মোস্তাক হোসেনের দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘মার্কিন চুক্তি’ নামের একটি অ্যাপে বিনিয়োগ করে রাজশাহীর শতাধিক লোক প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী, শুধু রাজশাহী অঞ্চল থেকেই প্রায় তিনশ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে এই চক্রটি। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিতে ১ লাখ থেকে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন অনেকে। অ্যাপটি বন্ধ করার পর তারা নিশ্চিত হন যে তারা প্রতারিত হয়েছেন।
ভিকটিমরা জানান, ইউএস এগ্রিমেন্ট অ্যাপটি ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে চালু করা হয়। রাজশাহীতে স্থানীয় এজেন্ট নিয়োগের মাধ্যমে গ্রাহকরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে এই অ্যাপগুলিতে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের চেয়ে বেশি লাভ হবে। বিদেশ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স যেমন বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে আসে, তেমনি মার্কিন চুক্তিতে বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক হিসেবে ডলার জমা করবে। শুরুতে কিছু বিনিয়োগকারী ব্যাংক হিসাবে কিছু ডলার জমা করে। তাদের দেখে অনেকেই মার্কিন চুক্তিতে অনলাইন বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকেছেন।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগে আরো বলেন, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি মার্কিন চুক্তি চালু হয়। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের পর কাউকে কোনো লাভ দেওয়া হয়নি। ব্যাংক সমস্যার কারণে, স্থানীয় এজেন্টদের মাধ্যমে কিছু টাকা নগদ হাতে দেওয়া হয়েছিল কারণ মুনাফা আসছে না। প্রতারকরা অ্যাপটি চালু রেখে আরও বিনিয়োগ করে চলেছে। তবে অনেক গ্রাহক গত এক বছর ধরে কোনো লাভ করতে পারছেন না।
মার্কিন চুক্তিটি অবশেষে গত নভেম্বরের শেষে অনলাইন থেকে উধাও হয়ে যায়। বিনিয়োগকারীরা স্থানীয় এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ করে যাদের মাধ্যমে তারা অনলাইনে বিনিয়োগ করেছে। অ্যাপস বন্ধ করার সাথে সাথেই এজেন্টরা অদৃশ্য হয়ে যায়। অবশেষে ১৮ জানুয়ারি রাজশাহীর মোস্তাক হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন।
মোস্তাক হোসেন আরও বলেন, অনেক পরে তারা বুঝতে পারেন যে অ্যাপটির নামে ইউএস থাকলেও এটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পরিচালিত হচ্ছে না। অ্যাপটির সার্ভার সিলেটের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে পরিচালিত হয়। যখন বুঝতে পারল, তখন আর কিছু করার নেই।
মামলা দায়েরের পর যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিতে প্রতারিত ৫৮ জনের তালিকা পান মোস্তাক হোসেন। তিনি সেগুলো পুলিশে দেন।
মোস্তাক হোসেন জানান, ঢাকার সাভারের কেউ যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিতে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। অ্যাপস বন্ধ দেখে সাভার থানায় অভিযোগও করেন তিনি। নির্যাতিতা তাকে ফোনে বিষয়টি জানায়।
মোস্তাক হোসেনের অভিযোগে আরও জানা যায়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিতে রাজশাহী বিভাগীয় রাজধানী নওদাপাড়ার ওয়াহেদুজ্জামানের (৩৮) মাধ্যমে বিনিয়োগ করেন। ওয়াহিদ 2022 সালে মার্কিন চুক্তিতে যোগ দেন।
রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হাবিবপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক রেজাউল করিমের ৯ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। রেজাউল করিম জানান, রাজশাহী নগরের লক্ষ্মীপুর এলাকার তাজুল নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে তিনি এই অ্যাপে যুক্ত হয়েছেন। অনলাইনে বিনিয়োগের জন্য কিছু টাকা ধারও নেন তিনি। মাত্র তিন মাসে কিছুটা লাভও পেয়েছেন তিনি। এখন সব শেষ.
এদিকে, রাজশাহী নগরীর শিরোইল এলাকার ব্যবসায়ী আবু বকর সিদ্দিক ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। মার্কিন চুক্তিতে ২৫ লাখ টাকা। তিনি জানান, ব্যাংকের চেয়ে বেশি লাভের কথা শুনে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিতে তার সঞ্চয় ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন। প্রথম কয়েক মাসে কিছুটা লাভ হয়েছে। গত বছর কিছুই পাইনি। রাজশাহীর এজেন্টরা তাকে বুঝিয়ে বলেন, কিছু সমস্যার কারণে লাভ হচ্ছে না। পরে আসবে এখন অ্যাপসগুলো সম্পূর্ণ বন্ধ।
অন্যদিকে, গত ১৮ জানুয়ারি আরএমপির রাজপাড়া থানায় অনলাইন প্রতারণার মামলা করেন মোস্তাক হোসেন। ওয়াহেদুজ্জামান (৩৮), তার স্ত্রী ও বিভাগীয় ব্যবস্থাপক ফাতেমা তুজ্জাহুরা (৩২), লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানার দেশনেতা মোতালেব হোসেন ভূঁইয়া (৩৫), মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের বাসিন্দা ফারুক হোসেন (৩৯) এবং বোয়ালিয়াপাড়ার বাসিন্দা মিঠুন মণ্ডলকে (৩৯)। রাজশাহী জেলা এজেন্ট নগরের মহল্লায়। (36)।
রাজপাড়া থানার ওসি রফিকুল হক বলেন, আসামিরা থানায় মামলা দায়েরের পর গা ঢাকা দিয়েছে। তবে পুলিশ তাদের অবস্থান জানার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, দেশে থাকলে তাদের গ্রেফতার করা উচিত।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী এমএলএম ব্যবসা এবং ক্রিপ্টো কারেন্সিতে বিনিয়োগ ও লেনদেন নিষিদ্ধ হলেও এর আগে এমটিএফই, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কোম্পানি মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ, ই-মুভি প্ল্যান এবং অন্যান্য অ্যাপ হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করেছে। রাজশাহী অঞ্চলের লাখ লাখ গ্রাহকের কাছ থেকে। যদিও মামলা হয়েছে ভিএ