অপরিচিত নাম্বারে অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠার ঘটনা নতুন নয়। অনেক নারী পুরুষ রয়েছেন যারা অপরিচিতদের নাম্বারে কল করে সম্পর্ক গড়ে তোলে এরপর নির্জনে ডেকে নিয়ে প্রতারণার মত অসামাজিক কাজ করে। এমন ঘটনা গনমাধ্যমে অনেকবার প্রকাশিত হয়েছে। এবার এমন একটি ঘটনা গণমাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়, অপরিচিত নাম্বার থেকে কল। আমি দুঃখিত! ভুল করে আপনার ফোনে টাকা চলে গেছে। রওশন আরা রুমা টাকা ফেরত পাওয়ার কথা বলতেন। এরপর নিয়মিত আলাপচারিতায় শুরু হয় বন্ধুত্ব। একপর্যায়ে বাড়িতে দাওয়াত। আর বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে বাড়ি গিয়ে অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে।
বুধবার রাতে রাজধানীর উত্তরা বার-তের মোড় এলাকা থেকে ‘বন্ধু-গন্ধবী চক্রের’ তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন এ প্রতিবেদককে এ তথ্য জানান।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা হলেন, মূল হোতা মোহাম্মদ মজনু (৩২) ও তার বান্ধবী রওশন আরা রুমা (৩৩) ও তার সহযোগী আবদুস সালাম (৫০)। এ সময় তাদের কাছ থেকে নগদ ৫৬ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।
ঢাকায় নারীদের প্রলোভনে পড়ে অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। বিভিন্ন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বিভিন্ন চক্র। রুমা-মজনুর এই বন্ধু চক্রের সদস্যও আটজন। এ চক্রের কয়েকজন সদস্য, পরে ডিবি, স্থানীয় প্রভাবশালী সেজে রুমার কয়েকজন মিলে নগ্ন নারীকে জিম্মি করে ছবি তুলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে গোয়েন্দাদের অভিযোগ।
ওসি মোহাম্মদ মহসিন জানান, তুরাগ তৃপ্তি ফুড অ্যান্ড বেকারির মালিক আল আমিনের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। পরে তদন্ত করতে গিয়ে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। বণিক মজনুই তার মালিক আল আমিনকে বন্ধুদের সাথে ফ্রেমবন্দী করে।
ভিকটিম ব্যবসায়ী আল আমিন জানান, ১১ জুলাই একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে। সে নিজেকে রুমা বলে পরিচয় দেয়। প্রথমে আমার মোবাইলে এই 50 টাকার ফ্লেক্সিলোড আসে। সে বলল তার টাকা আসছে। তার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলার পর। এভাবে কয়েকদিন কথা বলার পর একদিন রুমা তার বাসায় রাতের খাবার খেতে আসতে বলল। আমি রাজি যেহেতু আমি পাশে থাকি। পরে ওই বাড়িতে ভোজে যাওয়ার সময় কেরানি মজনুকেও তুলে নিয়ে যায়। বাড়ি যাওয়ার পর মজনু বাইরে যাচ্ছি বলে বেরিয়ে আসে। এর কিছুক্ষণ পর ডিবি পরিচয়ধারীরা বাড়িতে প্রবেশ করে।
আল আমিন বলেন, কিছু বোঝার আগেই মারধর শুরু হয়। আর রুমার সাথে আপত্তিকর ছবি তুলতে বাধ্য করে। পরে তারা ১০ লাখ টাকা দাবি করে। নতুবা তাকে গুম করার হুমকি দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তিনি তাদের সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন। এ সময় তারা ৩৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়।
ওসি মোহাম্মদ মহসিন বলেন, ডাকাতদলের সদস্যরা ফোন নম্বর সংগ্রহ করে এবং টাকা চলে গেছে বলে রুমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে। তারপর বাসায় ফোন দিল। পরে সেই চক্রের সদস্যরা নির্দিষ্ট সময়ে বিভিন্ন চরিত্রে হাজির হয়। তাদের কেউ ডিবি, কেউ প্রভাবশালী।
ওসি বলেন, এই চক্রের উদ্দেশ্য ছিল টাকা আত্মসাৎ করা। তারা বিভিন্ন সময়ে এটা করে। তবে এ পর্যন্ত কতজনকে প্রতারণা করেছে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে তারা এটা করেছে।
গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশে এমন অনেক চক্র রয়েছে যারা প্রতিনিয়ত এমন কর্মকাণ্ড করে চলেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বলে দাবি করেছেন এই মামলার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি দেশের মানুষকে অপরিচিতদের সাথে বন্ধুত্ব না করার পরামর্শ দিয়েছেন।