Sunday , December 15 2024
Breaking News
Home / National / স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ, কী ঘটেছিল সেদিন জাহাঙ্গীরনগরে

স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ, কী ঘটেছিল সেদিন জাহাঙ্গীরনগরে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড়। এ কলঙ্কজনক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শিক্ষকরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান ও বক্তব্য দিয়ে এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। শিক্ষকরাও একই কাতারে এসে ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। বিভিন্ন দাবিতে ভিসি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল জরুরি বৈঠক করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গণধর্ষণের ঘটনা এখন সবার মুখে মুখে। পরীক্ষার হল থেকে ক্লাসরুম, হোস্টেল, শিক্ষকের অফিস, ক্যান্টিন, চায়ের দোকান, সর্বত্র একই আলোচনা। বিশেষ করে ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর দায়ের করা মামলার আসামি গ্রেপ্তারের পর এখন থলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে বিড়াল। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে।

কিন্তু শ্রদ্ধা আর ভয়ে অনেকেই মুখ খোলেন না। সকল ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে মামলা করায় নারীর স্বামীকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অনেকে।
গণধর্ষণের ঘটনায় নিহতের স্বামী বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তিনি ছয়জনকে আসামি করেন। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানা পুলিশ ও আশুলিয়া থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ঘটনার রাতে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগ নেতাসহ চারজনকে আটক করে। এ ঘটনায় এখনো পলাতক ২ জন। গ্রেফতারকৃত চারজন হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, একই বিভাগের সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাব্বির হাসান। নিহতের পূর্ব পরিচিত পলাতক রয়েছে। মামুনুর রশীদ ও তার স্বামীকে আটকে রাখতে সহায়তাকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্রী মো. মুরাদ। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সাময়িকভাবে মুস্তাফিজকে বহিষ্কার করে এবং পরে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করে।

কী হয়েছে: পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী নারী ও তার স্বামী আশুলিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। পূর্ব পরিচিতদের সূত্র ধরে মামুনুর রশিদ ওরফে মামুন একই বাড়িতে ভাড়া নিয়ে থাকতেন। শনিবার মামুন মুঠোফোনে নির্যাতিতার স্বামীকে জানান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলে তার পরিচিত মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কয়েকদিন থাকবেন। তাই মামুন তাকে বলে ক্যাম্পাসে এসে দেখা করতে। কিছুক্ষণ মোবাইলে কথা বলার পর নির্যাতিতার স্বামী ক্যাম্পাসে আসেন। এরপর মীর মোশাররফ হোসেন হলের একটি কক্ষে দেখা হয় মুস্তাফিজ ও মুরাদের সঙ্গে।

তখন মামুন তাকে বলেন, তারা সাভারের একটি ইলেকট্রনিক্সের দোকানে কিছু টাকা পাবে। কিন্তু দোকানদার টাকা দিতে চায় না। ওই টাকার বিনিময়ে মামুন নির্যাতিতার স্বামীকে টিভি, ফ্রিজ ও ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্রসহ সমপরিমাণ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। ভিকটিম ও তার স্বামী পরিবারের জন্য আগে থেকেই কিছু আসবাবপত্র কিনতে চেয়েছিলেন। এ সময় মামুন ভুক্তভোগীর স্বামীকে বলেন, আমি যেহেতু কিছুদিন থাকবো, তোমার স্ত্রীকে আমার ব্যবহৃত কাপড় ক্যাম্পাসে নিয়ে আসতে বল। এরপর স্ত্রীকে ডেকে পোশাক নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে বলেন। রাত ৯টার দিকে ভুক্তভোগী ওই নারী ক্যাম্পাসে আসেন। ক্যাম্পাসে পৌঁছে তাকে মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে আসতে বলা হয়। মামুন, মুস্তাফিজ, মুরাদ ও নিহতের স্বামী আগে থেকেই হলের সামনে উপস্থিত ছিলেন। একপর্যায়ে মুরাদ নিহতের স্বামীকে হলের এ ব্লকের ৩১৭ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেঁধে রাখে। আর মুস্তাফিজ ও মামুন ওই নারীকে হলের পাশের বোটানিক্যাল গার্ডেনের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। দেড় ঘণ্টা পর তারা নির্যাতিতা নারী ও তার স্বামীকে ছেড়ে দেয়। ঘটনার বিচারের দাবিতে প্রথমে আশুলিয়া থানায় ও পরে সাভার মডেল থানায় যান তারা।

জবি সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে মামুনের সঙ্গে দেখা করতে আসার পরপরই নিহতের স্বামীকে মারধর করে ৩১৭ নম্বর কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে স্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে কাপড় আনার অজুহাতে ফোন দেওয়া হয়। ভিকটিম হলের সামনে এলে মামুন ও মুস্তাফিজ তাকে জানায় তার স্বামী জঙ্গলে আছে। তাই সেখানে যান। মামুনকে আগে থেকেই পরিচিত বলে বিশ্বাস করে সে বনের দিকে চলে গেল। পরে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

ঘটনার পরপরই ভুক্তভোগী নারী সাংবাদিকদের বলেন, মামুন আমাদের বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তিনি প্রথমে আমার স্বামীকে ফোন করেন। তার রেখে যাওয়া জিনিসপত্র নিতে বলায় আমি ক্যাম্পাসে যাই। সঙ্গে ছিলেন মুস্তাফিজ। তারপর ওপাশ থেকে আমার স্বামী আসবে বলে আমাকে হলের পাশের জঙ্গলে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, ঘটনার পর মুস্তাফিজ, মামুনসহ অন্যরা বিষয়টিকে খুব স্বাভাবিকভাবে নেন। তারা নির্ভয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। কিন্তু শিকারের পর জঙ্গল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং  পুলিশ ক্যাপাসে হাজির হয়। শিক্ষক ও সাধারণরা হলের কাছে এসে গেইটে দেন।

About Zahid Hasan

Check Also

যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেন্টমার্টিন লিজ দেওয়ার বিষয়ে যা জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি গুজব ছড়িয়েছে যে অন্তর্বর্তী সরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপকে লিজ দিচ্ছে। তবে প্রধান …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *