Sunday , December 22 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বুয়েটে চান্স পেয়েও ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা আবরারের ছোট ভাইয়ের, জানা গেল কারন

বুয়েটে চান্স পেয়েও ভর্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা আবরারের ছোট ভাইয়ের, জানা গেল কারন

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেয়েছেন আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফায়াজ। আবরার ফাহাদের মা মোহাম্মদ রোকেয়া খাতুন দেশের একটি জনপ্রিয় গনমাধ্যমকে বলেন, ফায়াজ আবরার মেধা তালিকায় ৪৫০ তম স্থান অধিকার করেছে। সে মেকানিক্যাল বিষয়ে ভর্তি হতে পারবেন। তবে ভর্তি হবেন কিনা সেই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আবরারে মা বলেন, আসছে ঈদে পর পরিবারের সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেব।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) হলে সহপাঠী ও ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে প্রয়াত আবরার ফাহাদের ছোট ভাই আবরার ফায়াজ বুয়েটে চান্স পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রাতে বুয়েটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, আবরার ফায়াজ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৪৫০ তম স্থান অধিকার করেছে। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর শুক্রবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেস// বুকে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন আবরার ফায়াজ।

স্ট্যাটাস হাইলাইট করা হয়-আলহামদুলিল্লাহ, ইনশাআল্লাহ, বুয়েটে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হতে পেরেছি। আসলে আমাদের এখন খুব খুশি হওয়ার কথা, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা কারো মুখে এক ফোঁটা খুশিও দেখতে পারিনি। তিনি গতকাল যে সময় আমাদের ফলাফল দিয়েছেন ২০১৭ সালে একই সময়ে
ঠিক একই সময়ে ভাইয়ারও ফলাফল দিয়েছিল। তারপর আমরা চারজন একই ঘরে বসলাম। চাচাও ছিলেন। লোকটির এক বন্ধু ফোনে বলল বুয়েট রেজাল্ট দিয়েছে। এত খুশি ভাই আমি আগে দেখিনি। আনন্দ যেন চোখে-মুখে দেখা যেত। আমিও সেদিন অনেক বেশি খুশি ছিলাম। সত্যি কথা বলতে, গতকাল সেদিনের আনন্দের ১০ শতাংশ আমার রেজাল্টও দেখিনি।

এখন পর্যন্ত আমার পরিবারের কেউ আমাকে বুয়েটে যোগ দিতে বলেনি। আসলে এ কথা বলার সাহস কারো নেই। আমার দাদা ভাইয়ের রেজাল্ট শুনে এলাকা জুড়ে বলতেন, তিনি কি আমাকে বারবার বলছেন, তুমি আর বুয়েটে যাও না। প্রয়োজনে রাজশাহী-খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা কর। তারা খুব খারাপ। আমি এখনও জানি না কোথায় পড়ব। আমি IUT তে ৪১ তম ছিলাম এবং আমি সেখানে CSE তে ভর্তি হয়েছি। আমাদের দুই ভাইয়ের বয়স আর ক্লাসের ব্যবধান ৪ বছর। তাই ভর্তির দিন ভাইকে বলছিলাম, তাহলে কথা হলো তুমি বের হবে আর আমাদের ব্যাচ ঢুকবে। ভাই একবার মাকে বললেন, ‘এই যে দেখছি বড় ভাইও পড়ে আর ছোট ভাইরাও বুয়েটে আসে। তোমার ছেলে কি করবে? লোকটার আসলে অনেক আশা ছিল যে আমি ভালো কোথাও ভর্তি হব। ভাই এক বন্ধুর সাথে দেখা হলে বলছিলেন, তুমি সাব্বির? তুমি খুব ভালো ছাত্র। বুয়েটে আসবেন? তোমার ভাই বলে তুমিও বুয়েটে যেতে চাও?
আমি জানি না কেন আমার ভাই সবসময় মনে করতো আমি পড়ালেখায় ভালো। যেখানে আমি স্কুলের পরীক্ষা ছাড়া টিকে থাকতে ভালো পারিনি। আসলে সে আমাকে আমার থেকে বেশি বিশ্বাস করেছিল।

তার ভাই প্রয়াত হওয়ার পর তার এক ছাত্র ও তার মা বাসায় এসে বলল, তোমার ভাই তোমাকে নিয়ে অনেক ভাবতো। আমি সবসময় তোমার কথা বলতাম। তিনি আমাকে সবসময় বলতেন কোথায় পড়তে হবে। রেজাল্টের দিন ভাইয়ার ফেস// বুকে আলহামদুলিল্লাহ বলে একটা পোস্ট দেন, আমি তখন আবার জোর করলাম, আমাকে ট্যাগ করতে। আজ হয়তো উল্টোটা হতো। এটি এমন কিছু হতে পারে যা আমার ভাইকে প্রথমবারের মতো খুশি করেছিল, কিন্তু এটি আর কখনও হয়নি। আমি এখনও জানি না এরপর কি করতে হবে। এখন পর্যন্ত আমি শুধু আমার ভাইয়ের দেখানো পথেই চলেছি। বলা যায়, ভাইয়ের দেখানো পথ এখানে পর্যন্ত ছিল। পরের দিন কেমন হবে তা দেখানোর সুযোগ সে কখনোই পায়নি। আমি জানি না আমার ভাই কি অবস্থায় আছে, সে কোথায় আছে কিন্তু আমি তাকে এখনকার মতো মিস করিনি। আপনারা সবাই আমাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। আমরা এত ভালবাসার যোগ্য কিনা জানি না। আসলে গত কয়েক বছর ধরে আমার শিক্ষক, বন্ধু বা আমাকে চেনেন না এমন অনেকেই যেভাবে আমাদের সহযোগিতা করছেন, তা আমাদের কাছে কতটা মূল্যবান তা ভাষায় প্রকাশ করা অসম্ভব। সবার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের একটি হলে আট ঘণ্টা আটকে রেখে আবরারকে নির্মমভাবে প্রয়াত করেন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ৭ অক্টোবর তার বাবা চকবাজার থানায় ১৯ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে পুলিশ মোট ২৫ জনকে আসামি করে, যাদের সবাই বুয়েটের বিভিন্ন বর্ষের ছাত্র এবং ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর এ মামলায় ২০ জনকে প্রাণদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

 

About Syful Islam

Check Also

চরম উত্তাল, কক্সবাজারের পাশে জন্ম হচ্ছে নতুন দেশ

বাংলাদেশের পাশেই আত্নপ্রকাশ ঘটতে যাচ্ছে একটি নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের। যে কোনো সময় নতুন দেশটি আত্মপ্রকাশ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *