বিএনপি দলীয় কাঠামো পুনর্গঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতা ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনার প্রচেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে ১৩টি জেলায় নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
বিগত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি জেলায় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেখানে সাবেক ছাত্রদল ও যুবদল নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হয়েছে। এই কমিটিগুলো গঠনের ক্ষেত্রে মেধা, পরিশ্রম ও ত্যাগকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দক্ষতার প্রমাণ দিতে পারলে অনেকে আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে পারেন।
নবগঠিত সাংগঠনিক জেলা কমিটি ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অধিকাংশ নেতার রাজনৈতিক ভিত্তি ছাত্রদল ও যুবদল থেকে। নেতাদের মতে, এই কমিটি গঠনের অন্যতম লক্ষ্য জাতীয় কাউন্সিল এবং ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
আগামী সংসদ নির্বাচনে যারা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবে, তাদের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রাপ্ত নেতারা তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্বে থাকবেন না, বরং কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃত্ব আলাদা রাখা হবে।
কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী, সাংগঠনিক জেলা কমিটির নেতৃত্ব নির্ধারিত হবে সম্মেলন বা কাউন্সিলের মাধ্যমে সরাসরি ভোটের ভিত্তিতে। ইতোমধ্যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দুই মাস অতিক্রান্ত হয়েছে।
রোববার ঘোষিত ১৩টি জেলায় নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে দেখা গেছে, অধিকাংশ নেতার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু ছাত্রদল ও যুবদল থেকে। সাতক্ষীরার আহ্বায়ক রহমতউল্লাহ পলাশ ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির সদস্য ছিলেন, সদস্য সচিব আবু জাহিদ ডাবলু ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি। একইভাবে অন্যান্য জেলায়ও ছাত্রদল ও যুবদলের নেতাদের শীর্ষ পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিভিন্ন জেলার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা নেতাদের মধ্যে রয়েছেন মেহেরপুরের আহ্বায়ক জাভেদ মাসুদ মিল্টন, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা ছিলেন। নাটোরের সদস্য সচিব আসাদুজ্জামান আসাদ স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক নেতা ছিলেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক লিয়াকত হোসেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। নারায়ণগঞ্জের আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ ছাত্রদলের প্রাক্তন নেতা ছিলেন। গাজীপুরের আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন।
সাংগঠনিক জেলায় সম্মেলন আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি কমিটিতে সাবেক ছাত্রদল নেতাদের মনোনীত করা হয়েছে। সিরাজগঞ্জের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমকে। বরিশাল মহানগরের দায়িত্বে আছেন ঢাবির সাবেক ছাত্রদল নেতা হাসান মামুন।
দলের নেতারা জানান, এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হলো দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা বৃদ্ধি ও তরুণ নেতৃত্বের মাধ্যমে দলকে পুনরুজ্জীবিত করা। এবার ওয়ার্ড থেকে জেলা পর্যন্ত প্রতিটি কমিটি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে গঠিত হবে, যা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘তরুণদের জন্য নেতৃত্বের পথ খোলা থাকতে হবে। দক্ষ, যোগ্য এবং আন্দোলনের মাধ্যমে উঠে আসা নেতাদের সুযোগ দেওয়া উচিত। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তরুণ নেতৃত্বকে সামনে আনা হচ্ছে, যাতে তারা দক্ষতা দেখানোর সুযোগ পান এবং দলকে শক্তিশালী করতে পারেন।’