Thursday , December 12 2024
Breaking News
Home / Countrywide / বাজারে বেগুন রেখে পালাচ্ছে ব্যবসায়ী-কৃষক

বাজারে বেগুন রেখে পালাচ্ছে ব্যবসায়ী-কৃষক

“রোজার আগে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করেছি দুই হাজার টাকা। ওই বেগুন বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ৪০০ টাকায়, তারপরও কেউ কিনছে না। এসব কথা বলেন বগুড়ার শাজাহানপুরের খাদশ পয়ালগাছা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম। .

তিনি এক বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেন। শাজাহানপুরের এই এলাকা বেগুন চাষের জন্য খুবই বিখ্যাত। বাইরের জেলার অনেক পাইকার সরাসরি জমাদারপুকুর থেকে বেগুন ক্রয় করে নিয়ে যান। কিন্তু হঠাৎ করে বেগুনের দরপতন হওয়ায় হতাশ নজরুল ইসলামের মতো অনেক কৃষক।

তিনি বলেন, রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগেও বেগুনের দাম ভালো ছিল। এখন প্রতি কেজি দাম ১০ টাকা। কিন্তু ঢাকার পাইকাররা কিনতে আসছেন না। বেগুন পাঠাতেও নিষেধ করছেন। হাটে এই দামেও বেগুন কেনার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না।

একই এলাকার আরেক কৃষক আয়নাল হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষে ওষুধসহ অন্তত ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিবার বেগুন তুলতে শ্রমিককে দিতে হয় ৪০০ টাকা। কিন্তু বাজার এমন হলে জমি থেকে বেগুন তোলাটা বৃথা। এজন্য জমি থেকে বেগুন গাছসহ তুলে ফেলেছেন আয়নাল হোসেন। সেখানে আপাতত বোরো ধান চাষ করছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বগুড়ার সব এলাকায় বেগুনের দাম অস্বাভাবিকভাবে কমেছে। অনেক হাটে কৃষকরা বেগুনের দাম না পেয়ে সেখানেই ফেলে রেখে আসছেন। বেগুনের ফলন বেশি হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি রমজানের কারণে এ সবজির চাহিদা কমে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

শেরপুরের সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের কৃষক তরিকুল ইসলাম জানান, প্রথমবারের মতো ৫ মণ বেগুন তুলেছি। গত শনিবার ৬০ টাকা খরচ করে চান্দাইকোনার পাইকারি বাজারে বেগুন নিয়ে যাই। সেখানে ১ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল। এটা দেখে আমি আর বিক্রি করিনি। এর ১ ঘণ্টা পর ওই দামেও আর বেগুনের ক্রেতা ছিল না। এরপর বাজারেই বেগুন রেখে পালিয়েছি।

উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজি বাজারে মঙ্গলবার প্রতি মণ বেগুন বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ৪০০ টাকায়। এ ছাড়া শাজাহানপুরের দুবলাগাড়ি বাজারে প্রতি মণ বেগুন ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় পাইকারি দরে বিক্রি হয়েছে।

বেগুনের হঠাৎ দরপতন নিয়ে কথা হয় মহাস্থানহাটের কৃষকদের নিয়ে গঠিত গ্রোয়ার্স মার্কেটের পরিচালক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার হাটে বেগুন ১০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বেগুনের দাম ছিল ৪০০ টাকা মণ। শুধু বেগুন নয়, সব সবজির চাহিদা কমে গেছে। মূলত রমজানের কারণে বাজারে সবজির চাহিদা কম। বেগুনের একই পরিস্থিতি। ঢাকা, চট্টগ্রামের পাইকাররাও বেগুন কিনছেন না।

আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, আবার এবার বেগুনের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রায় সব কৃষকের জমিতেই বেগুন। কিন্তু রমজান মাস হওয়ায় তারা বিক্রি করতে পারছেন না। এজন্য অনেক কৃষক বেগুন নিয়ে ফিরে গেছেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে এই পরিস্থিতি বদলে যাবে বলে আশা করছি।

তবে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী, কলোনী বাজারের একাধিক খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, একই বেগুনের দামের ফারাক অনেক। এসব বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা এই বেগুন বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান জানান, জেলায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে সবজির চাষ হয়। এর মধ্যে রয়েছে বেগুন। বগুড়ার প্রায় সব উপজেলাতেই বেগুনের চাষ হয়। তবে শাজাহানপুর, কাহালু, সদর, গাবতলী উপজেলার কৃষকরা বেশি বেগুন চাষ করেন। দাম ভালো পাওয়ায় অনেক কৃষক বেগুন চাষ করেছেন। বেগুনের ফলনও ভালো হয়েছে। দাম এখন কম তবে কয়েক দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

About Nasimul Islam

Check Also

১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু, প্রবাসীদের বড় ‘সুখবর’ দিলেন আসিফ নজরুল

বর্তমানে পাসপোর্টের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে একটি বড় সংকট চলছে। এই সমস্যা বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের জন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *