Friday , December 13 2024
Breaking News
Home / Exclusive / বাংলাদেশের গত তিন নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উদ্বেগ ছড়াচ্ছে: সাবেক ভারতীয় জেনারেল

বাংলাদেশের গত তিন নির্বাচনের অভিজ্ঞতায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উদ্বেগ ছড়াচ্ছে: সাবেক ভারতীয় জেনারেল

বাংলাদেশে ১২ তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগের তিনটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উদ্বেগ ছড়াচ্ছে। প্রথম প্রশ্ন- তত্ত্বাবধায়ক সরকার কি গঠিত হবে? দ্বিতীয় প্রশ্ন- প্রধান বিরোধী দল, বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কি শেখ হাসিনাকে টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চ্যালেঞ্জ জানাতে (নির্বাচনে) অংশগ্রহণ করবে?

(আমার) গত সপ্তাহে ঢাকা সফর স্পষ্ট করেছে যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ হাসিনার তত্ত্বাবধায়ক শাসনকে সমর্থন করার সম্ভাবনা কম, যার ফলে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমি যাদের সঙ্গে কথা বলেছি তাদের একাংশ বলেছেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলে বিএনপি জিতবে। তাদের মধ্যে বড়লোক (ধনী ব্যক্তি), ভদ্রলোক (বুদ্ধিজীবী) এবং সাংবাদিক ছিলেন।

আমার অবস্থানকালে বিএনপির হরতাল-অবরোধ চলছিল। তার সাথে ছিল কারখানায় মজুরি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ওয়াকআউট। বাংলাদেশের ৫৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানির ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক থেকে। (দেশ) ভঙ্গুর অর্থনীতিতে আরও বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। বিএনপি (জামাতের) মধ্যে সংঘ”র্ষ এবং আ.লীগ কর্তৃক প্রতিশোধমূলক হাম”লার ফলে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করা হয়।

ক্ষমতাসীন দলের বিরোধীরা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও দুর্নীতির কারণে পরিবর্তনের আওয়াজ উঠেছে। দুই বেগমের মধ্যে লড়াই আসলে তাদের ছেলেদের মধ্যে প্রক্সি যুদ্ধ।

তারেক রহমান লন্ডনে এবং সজিব ওয়াজেদ নিউইয়র্কে, যথাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পদের উত্তরাধিকারী। টাইম (ম্যাগাজিন) তার ২০ নভেম্বরের সংখ্যায় হাসিনাকে কাভার বানাবে।

যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমারা হাসিনাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহালের রাখার জন্য চাপ দিচ্ছে, যা তিনি সংবিধানের বাইরে রেখেছিলেন। ৩-৪ নভেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত প্রথম চাণক্য প্রতিরক্ষা সংলাপে, বাংলাদেশের প্রাক্তন পররাষ্ট্র সচিব শমসের চৌধুরী বলেছিলেন, (বাংলাদেশি নাগরিকদের উপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা) যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নয় হাসিনাকে রাজনৈতিক পছন্দ বাছাই করার জন্য চাপ দেওয়া। বিএনপির সাথে সংলাপ করতে অস্বীকার করেছেন হাসিনা। দলটিকে তিনি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন: “জো বাইডেন ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সংলাপে বসুক।”

বিএনপি এবং তার মৌলবাদী মিত্র জামায়াতে ইসলামী (যাদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হয়েছে) শুধুমাত্র অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায় বলে অভিযোগ করেন হাসিনা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, এশিয়ার ডেপুটি ডিরেক্টর মীনাক্ষী গাঙ্গুলী বলেছেন, বিরোধীদের টার্গেট করলে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হতে পারে না। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ বলেছেন, ভিন্নমতকে কঠোর হাতে দমন করাটা অবৈধ। ভারত এই বিষয়ে কথা বলতে চায় না। তারা বলছে- এটা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর মতো ঢাকাতেও চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক ভারত। এ বিষয়ে নীরব রয়েছে চীনও।

শিগগিরই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। নির্বাচনী আচরণবিধি কার্যকর হওয়ার আগেই বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধনে গতি আনছেন হাসিনা।

ভারত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেছিল (যার জন্য আওয়ামী লীগ কৃতজ্ঞ)। চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন সত্ত্বেও, ব্যাপকভাবে ভারত বিরোধী মনোভাব রয়েছে। ভারত হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদকে ডব্লিউএইচও (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিচালক হিসেবে ভোট দিয়েছে, নেপালের মনোনীত প্রার্থীকে অসন্তুষ্ট করে। শ্রীলঙ্কার মতো, নীতিনির্ধারকরা বলেছেন: “আমরা নিরাপত্তার জন্য ভারতের উপর এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য চীনের উপর নির্ভর করি।” ঢাকাও এসব বক্তব্য দেয়।

১৯৭৫ সালে মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশ শাসন করা সামরিক বাহিনী বর্তমানে বেসামরিক রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধানের বিরুদ্ধে তার দুই পলাতক ভাইকে সহায়তা করার অভিযোগ সহ বেশ কয়েকটি দুর্নীতির অভিযোগের মধ্য দিয়ে এই পরিবর্তন আসে।

সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে সেনাবাহিনী এখন দেশ পরিচালনায় হস্তক্ষেপ করবে না। রাষ্ট্রদ্রোহ ও বিএনপির সাথে যোগসাজশের অভিযোগে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান সোহরাওয়ার্দী (অব.) এর সাম্প্রতিক গ্রেপ্তার অস্বাভাবিক ছিল, যেমনটি ২৮ অক্টোবর হাসিনার চট্টগ্রাম সফরের সময় সেনা ইউনিটগুলিকে নির”স্ত্র করা হয়েছিল।

আশেপাশের বেশিরভাগ দেশের মতো বাংলাদেশেও ভারত তার সব ডিম এক ঝুড়িতে রেখেছে। বিএনপি’র আশ্চর্যজনক প্রত্যাবর্তন (তাকে) ঝামেলায় ফেলতে পারে।

[প্রবন্ধটি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক কে মেহতার একটি নিবন্ধ থেকে নেওয়া হয়েছে, যা ভারতীয় ইংরেজি দৈনিক দ্য ট্রিবিউনে প্রকাশিত হয়েছে (১১ নভেম্বর)। অনুবাদ করেছেন তারিক চয়ন]

 

About bisso Jit

Check Also

দুপক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১: পুরুষ শূন্য গ্রাম, আতঙ্কে পালিয়েছেন নারীরাও

মাদারীপুরের শিবচরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে সোমবার দুপুরে হিরু মাতুব্বর নামে একজন নিহত হয়েছেন। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *