পদত্যাগ সমাধান হলে করতে অসুবিধা নেই: রেলমন্ত্রী

কিশোরগঞ্জের ভৈরব স্টেশনের বাইরে চট্টগ্রামগামী একটি মালবাহী ট্রেন যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর গোধুলী এক্সপ্রেসের শেষ দুটি বগিকে ধাক্কা দেয়। সোমবারের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এখন পর্যন্ত এই দুর্ঘটনার পেছনে দুটি প্রধান কারণ রয়েছে। একটি হল লোকোমাস্টারের (রেলওয়ে চালক) সিগন্যাল অমান্য করে স্টেশনের কাছে আসা, অন্যটি হল ঢাকা (কমলাপুর) রেলস্টেশনে ইঞ্জিন টার্নিং ডিভাইস (টার্নিং টেবিল) এর ব্যর্থতা। এর ফলে ইঞ্জিনের দূরতম অংশ থেকে ট্রেন চালাতে হচ্ছে রেলচালকদের।

এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়েকে দায়ী করে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের পদত্যাগ ও দায়ী কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন রেল যাত্রী, যাত্রী কল্যাণ সমিতির নেতারা।

মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন স্বীকার করেন, লোকোমাস্টারের সিগন্যাল না মানার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, পদত্যাগ করলে যদি সমস্যার সমাধান হয় তাহলে সেটার তো কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কথা হচ্ছে, এখানে রেলমন্ত্রীর কতটা দায় আছে, সেটা দেখতে হবে। তবে আমার বিরোধীপক্ষ যারা আছে, তারা তো প্রতিনিয়তই আমার পদত্যাগ চায়। কারা দাবি করছে পদত্যাগ সেটাও দেখতে হবে।

রেলমন্ত্রী বলেন, আমার লোকোমোটিভ মাস্টারের জন্য দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাই দায়দায়িত্ব অবশ্যই থাকবে।  এই দুর্ঘটনা তো আর বলে কয়ে আসে না। সাধারণত দুর্ঘটনায় আমরা যা করি, মৃত্যুর তো আর কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না। তারপরও আমরা আমাদের সাধ্যমতো ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আর আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে রেল।

কমলাপুর রেলস্টেশনে ইঞ্জিন টার্নিং ডিভাইস (টার্ন টেবিল) নষ্ট। ফলে লোকোমাস্টারদের ইঞ্জিনের দূরতম অংশ থেকে ট্রেন চালাতে হয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় লোকোমাস্টারদের পক্ষ থেকে দুদিন আগে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল।

কমলাপুর টার্ন টেবিল ধ্বংসের জন্য কারা দায়ী- এমন প্রশ্নের জবাবে রেলমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি তদন্ত কমিটি করেছি। কারা দায়ী তা তারা সঠিকভাবে যাচাই করবে। তবে প্রাথমিকভাবে আমরা যা বুঝি তা নিয়ে কথা বলছি। তবে তা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর বোঝা যাবে। রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত আমরা কিছু বলতে পারব না।

ভৈরব রেল দুর্ঘটনার দায় রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন ও বাংলাদেশ রেলওয়ে এড়াতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

তিনি বলেন, রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব এড়ানোর সুযোগ নেই। দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর উচিৎ তাকে অপসারণ এবং রেলওয়ের দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা । রেলে মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে কিন্তু রেলওয়ে সংস্কার বা সিগন্যালিং ব্যবস্থার আধুনিকায়নের দিকে কোনো নজর নেই।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সিরাজ উদ-দৌলা খান বলেন, এই দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ রেলওয়ের তিনজনকে ইতিমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত হওয়া তিনজন হলেন লোকোমাস্টার জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী লোকোমাস্টার আতিকুর রহমান ও গার্ড আলমগীর হোসেন।

এ ঘটনা তদন্তে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে পৃথক তিনটি কমিটি করেছে।

দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে যুগ্ম সচিব (অডিট ও আইসিটি) আহ্বায়ক এবং উপসচিব (প্রশাসন-৬) কে সদস্য সচিব করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটিতে রয়েছেন- শহিদুল ইসলাম, সিওপিএস; মোহাম্মদ জাকির হোসেন, প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী; আরমান হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী; তুষার, সিএসপি এবং আহাদ আলী সরকার, চিফ মেডিকেল অফিসার।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে। ওই কমিটিতে হলেন- বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা, ঢাকা ২; বিভাগীয় মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার লোকোমোটিভ; বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ ঢাকা; বিভাগীয় সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী, ঢাকা।