Wednesday , October 30 2024
Breaking News
Home / Countrywide / নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পদ্মা সেতু

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পদ্মা সেতু

বাংলাদেশের মানুষের সপ্নের পদ্ম সেতু। এই সেতুকে ঘীরে মানুষের কত জল্পনা কল্পনা। তবে সকল প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগামি ২৫ জনু উৎভদনের মাধ্যমে ২৬ জনু যানবাহন চালাচল সুরুহবে বলে সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে ষড়যন্ত্রকারীরা না/ শকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টি সরিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেতু. বর্তমান পরিস্থিতিতে গত কয়েক দিনে পুলিশ সদর দফতরে বৈঠক হয়েছে। এছাড়া রোববার সেতু ভবনে এ বিষয়ে বৈঠকও হয়।

সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে আজ গণভবনে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন, সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য, বাজার তদারকি, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ইস্যু এবং ডলার ও টাকার মূল্যের ভারসাম্য নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।

একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, পদ্মা সেতু বর্তমান সরকারের একটি বড় অর্জন। এ সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে সরকারবিরোধী চক্র এবং দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহল নানা অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে। সরকারকে বিব্রত করার পাশাপাশি জনগণকে বিভ্রান্ত করার ষড়যন্ত্র করছে মহল। সেতুটি উদ্বোধনকে ঘিরে দেশজুড়ে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই উৎসবমুখর পরিবেশকে কলঙ্কিত করে জনগণের দৃষ্টি সরিয়ে নিতে নাশকতা সৃষ্টি করে দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের শুরু থেকেই ‘কাল্পনিক দুর্নীতির গল্প’ দিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয় বলে জানান ওই কর্মকর্তা। সেতুর আসন্ন মাহেন্দ্রক্ষণ সামনে থাকায় ষড়যন্ত্রকারীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়েছে। তারা সরকার বিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অশালীন ও অসম্মানজনক মন্তব্য করা হয়েছে। এর জের ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত এবং ২০০ জনের বেশি আ/ হত হওয়ার প্রেক্ষাপটে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে ষড়যন্ত্রকারীরা সরকারবিরোধী আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করতে পারে। তিনি বলেন, সরকার বিরোধী গোষ্ঠী ও স্বার্থান্বেষী মহল পদ্মা সেতুর ক্ষতিসহ সরকারকে বিব্রত করতে গুজব ও অপপ্রচারে লিপ্ত হতে পারে।

জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আছাদুজ্জামান মিয়া যুগান্তরকে বলেন, যখনই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আসে, আমরা তা সরকারের নজরে আনই। পদ্মা সেতু বর্তমান সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একটি যুগান্তকারী মাইলফলক হওয়ায় এর আশেপাশে কোনো অশুভ শক্তি যাতে সক্রিয় হতে না পারে সেদিকে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত বিষয়গুলো কমিটিতে নিয়মিত আলোচনা হয়। জাতীয় নিরাপত্তা কমিটি প্রতি দুই মাস অন্তর নিয়মিত বৈঠক করে। প্রতিটি বৈঠকেই নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি উঠে আসে। এটি খাদ্য নিরাপত্তা, ব্যবসা নিরাপত্তা, আর্থিক নিরাপত্তা বা অন্যান্য সমস্যা হতে পারে। এবারের সভায় আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল সাপ্লাই চেইন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলকে ব্যাহত করছে। খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাতের মুখে আমাদের পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখাই প্রধান বিষয়। ডলারের মূল্যের সাথে টাকার মূল্যের ভারসাম্য আনতে আমদানি ও রপ্তানি সমন্বয় করতে আমাদের কী করা দরকার তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।

ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, বৈঠকে সমসাময়িক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আলোকপাত করা হবে। রাজনীতির আড়ালে কেউ দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে তাকে রেহাই দেওয়া হবে না। কারা ষড়যন্ত্র করছে এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে তা নির্ধারণের দায়িত্ব কমিটির। তিনি বলেন, আলোচনার তৃতীয় বিষয় মেগা প্রকল্প। মেগা প্রকল্পগুলো যথাসময়ে শেষ করতে দেশ-বিদেশ থেকে যেসব বিপদ আসতে পারে, যেসব হুমকি আসতে পারে সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বাংলাদেশের জন্য বিষ। আমরা আমাদের দেশে রোহিঙ্গাদের দীর্ঘমেয়াদী প্রতিক্রিয়া পর্যালোচনা করছি। রোহিঙ্গারা আমাদের দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে বাধা হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, পদ্মা সেতুর শুরুতে ষড়যন্ত্র হয়েছে। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অনেকেই অসন্তুষ্ট। যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না, তারা পদ্মা সেতু পছন্দ করে না। তাদের ব্যাপারে সরকার, গোয়েন্দা সংস্থা ও দায়িত্বশীল প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল সতর্ক রয়েছে। আশা করছি, সব ষড়যন্ত্র ভেঙ্গে পদ্মা সেতুসহ সব মেগা প্রকল্প সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন হবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সোমবারের বৈঠকে উপস্থিত কেউ পদ্মা সেতু নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট হুমকির কথা উল্লেখ করলে সে বিষয়টি বিবেচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে কী ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা থাকলে আমরা গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও সক্রিয় করি। ” দেশে না বিদেশে কোনো অশুভ শক্তি কাজ করছে কিনা তা পর্যালোচনা করা যাক। পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে ঘিরে এসব বিষয়ও সামনে এসেছে। সেতুকে ঘিরে ইতিমধ্যে দেশের বাইরে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। দেশের ভেতর থেকে যে কেউ এ ধরনের কাজ করতে পারে। আমরা তাদের মনিটরিং করছি। সব ধরনের ঝুঁকি আমরা পর্যালোচনা করেছি। সে অনুযায়ী ফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। দেশজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। যেখানে বড় পর্দায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখানো হবে সেসব জায়গায় গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা উন্নত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের নির্বিঘ্নে চলাচল নিশ্চিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা হয়েছে।

ডিআইজি হায়দার আলী বলেন, কেউ নাশকতার পরিকল্পনা করলে তা সফল হবে না। আমরা ইতিমধ্যে ষড়যন্ত্রকারীদের নজরদারিতে এনেছি। আইনশৃঙ্খলা যাতে অবনতি না হয় সেজন্য আমরা প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অপপ্রচারকারীদের থেকে সতর্ক আছি। ষড়যন্ত্রকারীরা দেশের যে কোনো স্থানে যে কোনো ঘটনা ঘটিয়ে জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে পারে। তাই পুরো দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কেপিআই-অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠানসহ সব ক্ষেত্রেই পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে শরীয়তপুরের এসপি আশরাফুজ্জামান বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে কত স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা বলব না। তবে বলা যায় নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে সব স্তর। আশা করছি, কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।

আগামি ২৫ জুন বাংলাদেশে মানুষের অনেক প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সবাই অধির আগ্রহ করে আছে এই দিনের জন্য। ২৬ জুন থেকে যানবাহন চলাচল সুরু হবে সেতুর উপর দিয়ে। ধারনা করা হচ্ছে ২৫ জুন প্রয় ১০ লাখ মানুষ সেতুতে উপস্থিত হবে উৎভদনে অংশ্য নেওয়ার জন্য।

About Nasimul Islam

Check Also

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল রাষ্ট্রদূত হওয়ায় যা বললেন মিলার

বাংলাদেশের আলোচিত সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *