ছাত্র আন্দোলনের রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের ইঙ্গিত মিলছে। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দলের প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে ছাত্ররা সংগঠিত হলেও তাদের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আলাদা হবে, যেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারাও যুক্ত থাকবেন। তবে বর্তমান সরকারে থাকা ছাত্রদের প্রতিনিধিরাও নতুন রাজনৈতিক কাঠামোয় ভূমিকা রাখতে পারেন।
সরকারে থাকা ছাত্রদের তিন উপদেষ্টা—তথ্য ও সম্প্রচার এবং আইসিটি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, স্থানীয় সরকার ও যুব ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং উপদেষ্টা মাহফুজ আলম—ধাপে ধাপে পদত্যাগ করে নতুন দলে যোগ দিতে পারেন। তবে একইসঙ্গে সরকারে ছাত্রদের প্রতিনিধি রাখার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অভ্যন্তরে এ নিয়ে নীতিগত আলোচনা চলছে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেন, “ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক উদ্যোগে যুক্ত হতে সরকারে থাকা ছাত্রদের কয়েকজন উপদেষ্টা পদত্যাগ করতে পারেন। তবে একসঙ্গে সবাই পদত্যাগ করবেন কি না, সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। একজন নতুন উপদেষ্টা পরিষদে যোগ দেবেন কি না, সেটিও এখনো নির্ধারিত হয়নি।”
সূত্র জানিয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদে পরিবর্তন আসতে পারে এবং নতুন কিছু মুখ অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। জাতীয় নাগরিক কমিটির এক সদস্য জানান, “আমরা চাই, সরকারে আমাদের একজন প্রতিনিধি থাকুক, যিনি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অংশ নন। তবে এই সিদ্ধান্ত অভ্যুত্থানের অংশীজনদের সাথে সমন্বয় করেই নেওয়া হবে।”
জানা গেছে, নতুন দল ঘোষণার আগে নাহিদ ইসলাম প্রথমে পদত্যাগ করতে পারেন এবং তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আসতে পারেন। এরপর দ্বিতীয় ধাপে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও শেষে মাহফুজ আলম পদত্যাগ করবেন।
এদিকে, সংস্কার কমিশনসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে ছাত্রদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, যারা রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভূমিকা রাখছেন। অন্যদিকে, ছাত্র আন্দোলনের নেতারা নতুন রাজনৈতিক দলের কাঠামো চূড়ান্ত করতে এগিয়ে যাচ্ছেন। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দল ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে, শুরুতে আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হবে এবং পরবর্তীতে কাউন্সিলের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে।
সারা দেশে জাতীয় নাগরিক কমিটি ইতোমধ্যে আড়াই শতাধিক কমিটি গঠন করেছে এবং দল ঘোষণার আগে সেটিকে চার শতাধিক পর্যন্ত বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও তাদের সংগঠন বিস্তৃত করছে। নতুন দলের নাম ও প্রতীক নির্ধারণেও কাজ চলছে, যেখানে সাধারণ মানুষের মতামত নেওয়া হবে।
ছাত্র আন্দোলনের নেতারা রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন, যাতে তাদের নতুন দলে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। অভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের নেতৃত্বে গঠিত রাজনৈতিক শক্তি দেশ পরিচালনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে পারে।