Monday , December 30 2024
Breaking News
Home / Countrywide / এরকম নৈশীপ্রহরী বাংলার মাটিতে আছে কিনা সন্দেহ আছে, তার কর্মকান্ডে সবার মাথায় হাত

এরকম নৈশীপ্রহরী বাংলার মাটিতে আছে কিনা সন্দেহ আছে, তার কর্মকান্ডে সবার মাথায় হাত

দুর্নীতি করতে করতে মানুষের স্বভাব এতটাই খারাপ হয়ে গেছে যার কারণে মানুষ পৌছে গেছে অন্যায়ের অন্তীম সীমায়। অন্যায় করার সময় মানুষ ভবিষ্যত পরিণতির কথা। মানুষ লোভ ও অভ্যাসের বর্শবর্তী হয়ে একের পর এক অপরাধ করেই যাচ্ছে। সম্প্রতি জানা গেছে এক গ্যাস অফিসের নৈশপ্রহরী কোটি কোটি টাকার মালিক।

মনির হোসেন ওরফে গ্যাস মনির তিতাস নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পিনাদী ওয়ার্কশপ মোড় এলাকার নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত। মাত্র কয়েক বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তিনি। এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ, চুলা প্রতি গ্যাসের টাকা অবৈধ উত্তোলন ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন মনির হোসেন। তার নামের প্রভাব এতটাই যে এলাকার বাসিন্দাদের কাছে তিনি পুরো এলাকায় গ্যাস মনির নামেই পরিচিত।

মনির হোসেন ওরফে গ্যাস মনির তিতাস একজন অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী বা নৈশ প্রহরী, তবে তিনি এলাকার একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। স্থানীয়রা জানায়, মনির হোসেন ওরফে গ্যাস মনির তার নিজ এলাকা পাইনদী ও আশপাশের হিরাঝিল, মিজমিজি, টেরামার্কেট, কান্দাপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ প্রদান করে এবং তিতাস অফিসের সঙ্গে যোগসাজশে লাইন বিচ্ছিন্ন করে।

মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই বহুতল ভবনের মালিক হয়েছেন। পাইনদী ওয়ার্কশপের মোড় এলাকায় চারতলা জমিতে নির্মিত তার বহুতল ভবনের আনুমানিক ব্যয় পাঁচ কোটি টাকা। তিন একর জমি নিয়ে তার কয়েকটি দোকানও রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য দুই কোটি টাকা। চাঁদপুরের গ্রামে নামে এলাকায় জমি কিনেছেন। কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিতাস গ্যাস অফিসের নিরাপত্তা কর্মীদের ইনচার্জ মনির হোসেন ছয় বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস অ্যান্ড ট্রান্সমিশনে কাজ করেছেন। এ সময় তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনদী এলাকার সব গ্যাস সংযোগ দেন এবং অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পুনরায় চালু করেন। তিতাসের সোনারগাঁও অফিসে এসে আবারও অবৈধভাবে উপার্জন শুরু করেন। অনেক বাড়িতে অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে টাকা আদায় করেছে গ্যাস মনির। এ ছাড়া অবৈধ সংযোগ থাকা বাড়ি থেকে মাসিক হারে গ্যাসের বিল আদায় করেন। সেই সুবিধা নিয়ে তিনি কাড়ি কাড়ি টাকার মালিক হয়েছেন। অন্যদিকে পাইনদী এলাকায় অবৈধভাবে গ্যাস-গ্যাস সংযোগের নামে চুনাভট্টি মালিকদের কাছ থেকেও চাঁদাবাজি করেন তিনি।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও তিতাস অফিসে কর্মরত নিরাপত্তা কর্মীদের নেতা মনির হোসেন বিভিন্ন সময়ে গ্যাস সংযোগ ও আবাসিক গ্যাস সংযোগের নামে অবৈধভাবে টাকা আদায় করেছেন।

পাইনদী ওয়ার্কশপ মোড় এলাকার চা দোকানদার আব্দুল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, “তিনি আর গ্যাস মনির হোসেন নন, অনেক সম্পদের মালিক। এলাকায় একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তিনি গাড়ি চালান। অঢেল সম্পদের মালিক হও।’ হাসিবুল খন্দকার বলেন, কয়েক বছরের ব্যবধানে গ্যাসের কারবার করে মনির হোসেন এখন কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তিনি কোটিপতি দানবীর হয়ে এলাকায় বিচরণ করেন।

ভুক্তভোগীরা জানান, বৈধ সংযোগের কথা বলতে গিয়ে মনির হোসেন যে সংযোগ দিয়েছেন তা এখনো অবৈধ। সরকার তিতাস গ্যাস বন্ধ ঘোষণা করার পর ওই এলাকায় মনির হোসেনের দেওয়া সব সংযোগই অবৈধ। মনির হোসেন তিতাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে এসব সংযোগ বৈধ করেন এবং সংযোগ থেকে চুলা প্রতি এক হাজার টাকা করে নেন। শুধু তাই নয়, অবৈধ সংযোগের কথা বলে অনেক বাসিন্দার কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেন।

নিরাপত্তারক্ষী হয়ে এত সম্পদের মালিক কীভাবে হলেন জানতে চাইলে মনির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি সৎ উপার্জনের মাধ্যমে সব কাজ করেছি। আমি বেআইনি কিছু করিনি। ‘

সোনারগাঁ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) সুরুজ আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, তিতাসের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিতভাবে ব্যবস্থা নেয় তিতাস কর্তৃপক্ষ। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ কালের কণ্ঠকে বলেন, কেউ অনৈতিকভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হলে সেসব বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, “অপরাধী যেই হোক না কেন, তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না। যে কেউ অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করবে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।

প্রসঙ্গত, মানুষ অল্পতে তুষ্ট হয় না, সে যত পায় তত চায়। মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কোনো শেষ নেই। মানুষের এই অভ্যাসটি খুবই খারাপ। মানুষ যদি অল্পতেই তুষ্ট থাকতো তাহলে হয়তো পৃথিবীতে এতো অপরাধ ও নৈরাজকতার সৃষ্টি হতো না।

About Shafique Hasan

Check Also

কোহিনূরের পর বিশ্বের সবচেয়ে দামি হীরা দরিয়া-ই-নূর বিদেশে পাচার করেছিল শেখ হাসিনা

ঢাকার নবাবি আমলের মহামূল্যবান হীরকখণ্ড ‘দরিয়া-ই-নূর’ নিয়ে রহস্য আজও অমীমাংসিত। ২০১৬ সালে সোনালী ব্যাংক সদরঘাট …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *