দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতি দ্রুত পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। ভারত ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যগত সম্পর্ক শিথিল হচ্ছে, সেই সুযোগে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে চীন ও পাকিস্তান। চিকিৎসা, বাণিজ্য এবং কৌশলগত অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে ভারতকে পেছনে ফেলে নতুন মিত্রদের দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ।
একসময় ভারতীয় পেঁয়াজ ও আলুর ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ এখন পাকিস্তান থেকে এসব পণ্য আমদানি করছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত বাংলাদেশে ৭.২৪ লাখ টন পেঁয়াজ রপ্তানি করলেও সাম্প্রতিক পরিবর্তনের ফলে ভারতীয় আমদানি হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশ এখন মিশর, চীন ও তুরস্কের দিকেও নজর দিচ্ছে, যা ভারতীয় ব্যবসায়ীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতের চিকিৎসা পর্যটন খাতও বাংলাদেশি রোগীদের ওপর নির্ভরশীল ছিল। প্রতিবছর ভারত ৯০০ কোটি ডলার আয় করত, যার ৮০ শতাংশই আসত বাংলাদেশি রোগীদের কাছ থেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে বাংলাদেশিরা ভারত এড়িয়ে চীনে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন, ফলে ভারতীয় হাসপাতাল ও পর্যটন খাত আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
চীন বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বিশাল বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে এবং পূর্বাচলে একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশকে “গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক প্রতিবেশী” হিসেবে উল্লেখ করে এ বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দ্রুত গভীর হচ্ছে। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চারগুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায়, ঢাকা-করাচির মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনাও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
রমজান উপলক্ষে বাংলাদেশ এবার পাকিস্তান থেকে বিপুল পরিমাণ খেজুর আমদানির পরিকল্পনা করেছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে।
বিশ্লেষকদের মতে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নতুন কৌশল ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে ভারতকে এড়িয়ে বিকল্প মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করছে, যা মোদী সরকারের জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে।