Wednesday , October 30 2024
Breaking News
Home / opinion / আ.লীগের মধ্যে এক ধরনের নার্ভাসনেস দেখা যাচ্ছে: আসিফ নজরুল

আ.লীগের মধ্যে এক ধরনের নার্ভাসনেস দেখা যাচ্ছে: আসিফ নজরুল

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতি বিশ্বের অনেক দেশের নজরে এসেছে। এই বিষয়টির সাথে সাথে দেশের বিরোধী ও সমমনা দলগুলো রাজপথে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষনা দিয়েছে। আজ ২৮শে অক্টোবর বিএনপি আন্দোলনের ডাক দিয়ে সমাবেশ করছে, যেটা এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ আন্দোলন হতে যাচ্ছে। এবার এই আন্দোলনের বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আলোচিত ব্যক্তিত্ব ও সমালোচক আসিফ নজরুল। তার মন্তব্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-

আজ ২৮শে অক্টোবর বিএনপি যে কর্মসূচি দিয়েছে, এরকম কর্মসূচি বিএনপি আগেও দিয়েছিল। যখন খুব বড় কোনো জমায়েত করার চেষ্টা বা কর্মসূচি দেয় বিএনপি, আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের নার্ভাসনেস আমরা দেখি। তারা পুলিশের মাধ্যমে নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। সমাবেশের স্থান কোথায় হবে সে নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করে। এর আগে আমরা দেখেছি সমাবেশের স্থান ইলেভেন্থ আওয়ারে জানানো হয়।

এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো নেতাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তো এই সমাবেশ যদি করতে না দেয়া হয়, বিএনপি’র দাবি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে যে বিশাল সংখ্যক মানুষ আছে, এটা প্রমাণ করবে কীভাবে? এটা প্রমাণ করার উপায় হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মসূচি করতে দেয়া। আমরা যদি অতীতে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি দেখি, যখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে ছিল, বহু সমাবেশ অতীতে করেছে। হ্যাঁ, বিএনপি বাধা দিয়েছিল কিন্তু এই মাত্রায় বাধা দেয়া হয়নি। আপনি যেটা বললেন যে, আওয়ামী লীগ বলেছে যে রাস্তায় বসতে দেয়া হবে না।

আমি এটার যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা যদি পৃথিবীর বিভিন্ন কনটেম্পোরারি আন্দোলনও দেখি, তখনো কিন্তু রাস্তায় মানুষ বসে পড়েছে। আমাদের অতীতে শাহবাগে যে সমাবেশ ছিল, দুই তিন মাইল পর্যন্ত রাস্তায় মানুষ বসে ছিল, শাপলা চত্বরে মানুষজন বসে ছিল। রাস্তায় বসতে দেয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের আপত্তির কারণ আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। কারণ যদি হয় এটা যে, জনগণের চলাচলের দুর্ভোগ সৃষ্টি হবে, সেটা হবে একটা খোঁড়া যুক্তি। কারণ অতীতে আমরা আওয়ামী লীগকে বহু কর্মসূচি পালন করতে দেখেছি।

আওয়ামী লীগের নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন কোনো রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করেন, মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। অপরিকল্পিত রাস্তার উন্নয়নের ফলে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের সমাবেশের কারণে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে তো দুর্ভোগ আছেই। দ্রব্যমূল্যের ব্যাপার আছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি আছে, ব্যাংক লুটতরাজের কারণে লোকজনের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। তো আমার কথা হচ্ছে দুর্ভোগ যদি বিবেচ্য বিষয় হতো তবে এই কাজগুলো কেন করা হয়েছে সরকারি দলের পক্ষ থেকে?

আরেকটা কথা হচ্ছে আমি একটা জিনিস বুঝতে অপারগ যদি বিএনপি কিছুদিন পরপর পাঁচ লাখ, দশ লাখ লোক রাজপথে নিয়ে আসে, আসার পর তারা আবার চলে যায়, তাহলে কী সরকার তাদের দাবি মেনে নিবে? মেনে নেবে না। সরকার বলছে- আপনারা আন্দোলন করেন, করে আবার চলে যান। কোনোরকম চাপ সৃষ্টি করবেন না, কোনোরকম সহিংসতা সৃষ্টি করবেন না। ‘সহিংসতা করবেন না’ সরকারের এই কথার সঙ্গে আমি একমত। কিন্তু কোনোভাবে চাপ সৃষ্টি করবে না! আমরা অতীতে বহুবার সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি দেখেছি।

আমরা শুনছি, বিএনপি সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি করবে এবং আওয়ামী লীগ এটা করতে দেবে না। কিন্তু কোন কর্মসূচি যেটা দ্বারা আপনার উপর চাপ সৃষ্টি করা যায় এবং ব্যাপক জনসমর্থন আছে সেটা যদি আপনি করতে না দেন, সেটা যদি দমন করেন তাহলে মানুষ যাবে কোথায়? আপনি ভোটের মাধ্যমেও জনমতকে রিফ্লেক্টেড হতে দেবেন না, জনসমাবেশের মাধ্যমেও যদি জনমতকে রিফ্লেক্টেড হতে না দেন, অনিশ্চিত এবং সংঘাতের পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়।

আমি আশা করবো বিএনপি যদি ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে, তারা যদি রাস্তায় বসে থাকার কর্মসূচি পালন করে যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অহিংসভাবে এটা করবে, সরকারের উচিত না সেটা বাধা দেয়া। আবার যদি পুলিশ বিভিন্নভাবে বাধা সৃষ্টি করে, জনগণকে ওখানে উত্ত্যক্ত করে তোলে, তাদের যদি প্রভোক করে, তারপর সেখানে যদি কোনো সংঘাত হয়, সেটার দায় পুলিশ এবং সরকারকে নিতে হবে। এগুলো কমন সেন্সের ব্যাপার। এটা কোনো পক্ষপাতিত্বের ব্যাপার না।

আপনি অ্যাটাক করবেন, লোকজনের মোবাইল ফোন তল্লাশি করবেন, ঢুকতে দেবেন না, পেটাবেন, গায়েবি মামলা দেবেন, আপনি যা ইচ্ছা তাই করবেন, আর লোকজন শুধু শান্তিনিকেতনী কায়দায় এসে একটা কথা বলে চলে যাবে, এটা রিজনেবল এক্সপেক্টেশন না। যদি তারা শান্তিপূর্ণভাবে কোনো জায়গায় বসে হোক বা ঘেরাও করে হোক কর্মসূচি পালন করে দেখাতে পারে যে, কতো লোক তাদের পক্ষে আছে, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হিসেবে সেটাতে বাধা দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখি না।

আপনি আক্রমণ করবেন, মানুষের মোবাইল ফোন তল্লাশি করবেন, প্রবেশ করতে দেবেন না, মা”রধর করবেন, গায়েবি মামলা দেবেন, আপনি যা খুশি তাই করবেন, এবং লোকনেরা কেবল আসবে এবং শুধু শান্তিনিকেতনী কায়দায় এসে একটা কথা বলে চলে যাবে, এটি কোনও যুক্তিসঙ্গত প্রত্যাশা নয়। শান্তিপূর্ণভাবে জায়গায় বসে হোক বা ঘেরাও করে হোক কতজন মানুষ তাদের পাশে আছে তা যদি কর্মসূচি পালন করে দেখাতে পারে যে, কতজন মানুষ তাদের পক্ষে আছে, তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলে এটাকে থামানোর কোনো যৌক্তিকতা দেখি না।

 

About bisso Jit

Check Also

সংবিধানের কমফোর্ট জোনে থেকে আরেক হাসিনা বানানোর পাঁয়তারা: পিনাকী

বাংলাদেশের জনগণ তাদের সার্বভৌম শক্তির সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটাচ্ছে এবং প্রয়োজনে আবারও করবে। সময়ের সাথে সাথে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *