Friday , December 27 2024
Breaking News
Home / Countrywide / আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ঘাপটি মেরে বসেছে রাজাকারদের সন্তান-স্বজন, তালিকা তৈরি হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ঘাপটি মেরে বসেছে রাজাকারদের সন্তান-স্বজন, তালিকা তৈরি হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের

ভোল পালটে, পরিচয় গোপন করে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ঘাপটি মেরে বসেছে রাজাকার, আলবদর ও আলসামসের কর্মকর্তাদের সন্তান-স্বজনরা। ছাত্রাবস্থায় যারা শিবির ও ছাত্রদল করেছে, তারা এখন বড় আওয়ামী লীগার। অনেকে বাবার নামে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তৈরি করে সরকারের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধাও নিয়েছেন। একদিকে তারা অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জন করছে, অন্যদিকে সরকারকে বিব্রত করতে দেশ-বিদেশের তথ্য ফাঁস করছে। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অনেকেই এ কাজ করছেন। তারা পদোন্নতি ও সুবিধা পাচ্ছেন। তথ্য গোপন করে সুবিধা নিচ্ছেন এমন সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকা করছে বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা।

এ ছাড়া মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অধিদপ্তর ও মাঠপর্যায় পর্যন্ত স্ব-প্রশাসন এসব সুবিধাভোগীদের পোষ্যদের চিহ্নিত করতে কাজ করছে। এদিকে ‘ছাগল কেলেঙ্কারি’র পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তথ্য অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ছাগলকাণ্ডের পর ড. মতিউর রহমানের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ দেশে-বিদেশে থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে।

মতিউর এনবিআরে থাকা অবস্থায় হাজার হাজার কোটি টাকা কামিয়েছেন। অনেক দলীয় নেতা, বড় বড় ব্যবসায়ী, আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য, স্থলবন্দর-বিমানবন্দর দিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানকারী ছাড়াও যারা হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ মালামাল এনেছেন, তারা মতিউর দ্বারা উপকৃত হয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হয়েছেন মতিউরের দ্বারা। তাই তাকে বাঁচানোর জন্য অনেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ইতিমধ্যে সুবিধাভোগীদের দ্বারা ‘মতিউর রক্ষা কমিটি’ গঠিত হয়ে গেছে। কারণ মতিউর রক্ষা না পেলে অনেকেই ফেঁসে যাবেন।

মতিউর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা সরকারের অর্থনৈতিক বিভাগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত। এই দলটিও মতিউরকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। ছাত্রাবস্থায় মতিউর ছাত্র শিবির করতেন, পরে দল পাল্টে আওয়ামী লীগে যুক্ত হন। এভাবে বিরোধী মতাদর্শীরা নব্য আওয়ামী লীগার সেজে অর্থ-বিত্তের মালিক বনে যাচ্ছেন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে অসংখ্য মতিউর রয়েছেন। রাজাকার, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার পোষ্যসহ দলবাজ, হাইব্রিড ও বিতর্কিতরা এখন নজরদারিতে রয়েছেন।

জানা যায়, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী থেকে হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের চেয়ারম্যান পর্যন্ত হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন ডা. দিলীপ কুমার রায়। তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের একটি আলোচনাসভায় দলের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্যের সময় তার পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে ডা. দিলীপ কুমার রায়কে। এটি আরও বেশি সমালোচনার জন্ম দিয়েছে দলের মধ্যে এবং দলের বাইরে। একই সঙ্গে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, সরকারের অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত। একজন দুর্নীতিবাজের জন্য এই অর্জন ম্লান হবে তা কারো কাম্য নয়।

রাজাকার, আলবদর ও আলসামস কর্মকর্তাদের সন্তান ও স্বজনদের ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, এগুলো সরকারের জন্য বিপজ্জনক। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। রাজাকারের সন্তান ও স্বজনদের কারণে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা কাজ করতে পারছেন না।

প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে রাজাকারের সন্তান-স্বজনদের দাপট বেশি। একজন পিয়ন পর্যন্ত কোটি কোটি টাকার মালিক। অবৈধ অর্থ-সম্পদের মালিক বনে যাওয়া অনেক আমলা রয়েছেন। তাদের তালিকা হয়েছে। আমলাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৫২ জন কর্মকর্তা বিদেশে বিপুল অর্থ পাচার করেছেন, তাদেরও তালিকা করা হয়েছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

এদিকে রাজাকার পরিবারের সন্তান ও স্বজনদের প্রভাবের কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ও শহীদ নেতার পরিবার প্রশাসন ও দলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। রাজাকা পরিবারের বংশধররা প্রতি মাসে অনেক নেতাকে ক্ষমতাচ্যুত করে টিকে আছে। তথ্য পাচারের কারণে ইতিমধ্যে একজন পুলিশ সদস্য চাকরি হারিয়েছেন। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, রাজাকার-আলবদরের পোষ্যরা সরকারের ভেতর থেকে সরকারের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। কেউ কেউ এমপি হয়ে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।

About Nasimul Islam

Check Also

খেজুরের রস পান করতে এসে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান, গ্রেফতার ১৫

নেত্রকোনা থেকে খেজুরের রস খেতে কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া আসা ১৫ যুবক ‘জয় বাংলা’সহ বিভিন্ন স্লোগান দেওয়ায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *