Saturday , October 12 2024
Breaking News
Home / Countrywide / অবশেষে জানা গেল আইএমএফ-এর ঋণ পেতে বাংলাদেশকে কি কি শর্ত মানতে হয়েছে

অবশেষে জানা গেল আইএমএফ-এর ঋণ পেতে বাংলাদেশকে কি কি শর্ত মানতে হয়েছে

বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও উন্নত দেশের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। তবে ঋণ দেবার পূর্বে ঋণদাতা সংস্থাগুলো কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। আর সেই শর্তগুলো মেনে নিয়ে সময়মত পূরণ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হয়। সম্প্রতি জানা গেল আইএমএফ-এর ঋণ পেতে কি কি শর্ত মানতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

বাজেট সহায়তার জন্য প্রত্যাশিত ঋণ পেতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া শর্ত পূরণে বাংলাদেশের খুব বেশি সমস্যা হবে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, শর্তগুলো সেকেলে। এগুলো বাস্তবায়নে সরকার ইতিমধ্যেই আন্তরিক। তবে এর পাশাপাশি সরকারকে রিজার্ভ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।

সূত্র জানায়, আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে বাংলাদেশকে অর্থনীতিতে কিছু সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব খাতে স্বয়ংক্রিয়তা প্রবর্তন, আর্থিক খাতে ঋণ ও আমানতের সুদের হারের সীমা প্রত্যাহার, জ্বালানির দাম অন্তর্ভুক্ত এমন একটি সূত্র প্রবর্তন, বাজেট থেকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিকে আলাদা করা এবং কৃষি ভর্তুকি হ্রাস করা।

তবে সূত্র আরো জানায়, এসব শর্ত ও সংস্কার সরকার নিজস্বভাবে করছে, তাই দাতা সংস্থাগুলো নতুন কোনো সমস্যা তৈরি করবে না।

২০২২ সালে করোনার প্রভাব কমলেও ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের অর্থনীতিতে। ডলার সংকটের পাশাপাশি আমদানি ব্যয়ও বেড়ে যায়। রিজার্ভ কমছে। গত ২০ জুলাই যা দাঁড়ায় ৩৯.৪৯ বিলিয়ন ডলারে।

জুলাই মাসে বাড়লেও আগের কয়েক মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ কমেছে। সব মিলিয়ে লেনদেনের ভারসাম্য নিয়ে নেতিবাচক পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সরকার মুদ্রা বাজারকে স্থিতিশীল করতে, রিজার্ভ বাড়াতে এবং বাজেট ঘাটতি মেটাতে আন্তর্জাতিক ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেওয়ার আবেদন করেছে বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের আর্থিক পরিবেশ কিছুটা সংকটে রয়েছে এবং তা মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নেওয়া উচিত। এতে কোনো জটিলতা দেখছেন না বলে জানান তারা।

জানা গেছে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের অর্থপ্রদানের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং বাজেট সহায়তার জন্য সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সহায়তাও চাচ্ছে। করোনার সূচনায় সরকার উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে সহায়তা চেয়েছিল।

এবার $৪৫০ মিলিয়ন আইএমএফ, $৭৫০ মিলিয়ন বিশ্বব্যাংক বাজেট সহায়তা এবং $২৫০ মিলিয়ন জলবায়ু তহবিল থেকে, $৭৫০ মিলিয়ন জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (JICA), $১০০ মিলিয়ন এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (ADB), এশিয়ান প্রচেষ্টা। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (AIIB) থেকে $৪০০ মিলিয়ন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে $৯.৯ মিলিয়ন পাওয়ার জন্য তৈরি করা হচ্ছে।

সব মিলিয়ে ৭৭৪.৯ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছে সরকার। এতে আগামী তিন বছরের জন্য ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার চেয়ে আইএমএফের কাছে চিঠি দিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশকে এই ঋণ সহায়তা দেওয়ার জন্য আইএমএএফ থেকে সবুজ সংকেতও পাওয়া গেছে, যা গত ৪ আগস্ট কৃষিমন্ত্রী দিয়েছিলেন। আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “সরকার আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য দাতাদের কাছে বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ চাইছে। এখন আমাদের রিজার্ভ বাড়াতে হবে। এমন প্রেক্ষাপটে দাতাদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তা হিসেবে ঋণ নিতে কোনো সমস্যা হবে না।

জাহিদ আরও বলেন, ‘ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে আইএমএফ বাংলাদেশকে কিছু সংস্কার করতে বলবে। যা তারা আগেই বলেছে। এ ধরনের শর্ত ও সংস্কার সরকারের করা উচিত।

নিয়মিত সফরের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তারা।

তবে আয় বাড়িয়ে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকির পরিমাণ কমানোর পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ।

প্রতিনিধিরা ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে এবং আমানত ও ঋণের সুদের হারের ৯ ও ৬ শতাংশের সীমা প্রত্যাহার করার পরামর্শ দেন।

আইএমএফের প্রতিনিধি দল খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে পর্যায়ক্রমে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের জন্য আইএমএফের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ আগস্ট মধ্যরাত থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার।

এছাড়া, IMF প্রতিনিধিদল বাজেট অর্থায়ন থেকে সঞ্চয় বন্ডকে আলাদা করারও পরামর্শ দিয়েছে।

অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংক ও জাইকার কাছ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার বিষয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে।

এছাড়া এআইআইবির কাছ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা পেতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আলোচনা করছেন।

ইইউ থেকে ৯.৯ বিলিয়ন ডলার পাওয়ার একটি চুক্তি শীঘ্রই স্বাক্ষরিত হবে।

সূত্র জানায়, চলতি (২০২২-২৩) বাজেটে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা পেতে দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে।

অর্থ বিভাগ আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ক্রিস্টালিনা জর্জিভাকে তিন বছরের মধ্যে ৪.৫ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়ে চিঠি দিয়েছে। অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে ঋণ নিয়ে প্রয়োজনীয় আলোচনা শুরু করার জন্য আইএমএফকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, আমরা যখন অর্থনীতি পরিচালনা করি তখন আমাদের ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হয়। আমাদের ঋণ দরকার। আর কয়েকটা দিন দরকার। তাহলে ঋণ থাকবে না। আমরা বলেছিলাম ঋণ দেব।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সাথে বলতে গেলে বিশ্বের প্রত্যেকটি দেশের সম্পর্ক খুবই ভালো। তাই বাংলাদেশ বিশ্বের দেশগুলোর কাছে বন্ধু রাষ্টর হিসেবে খুবই সমাদৃত। বাংলার মানুষের প্রত্যাশা এমন বন্ধুত্ব সম্পর্ক অটুট থাকবে চিরকাল।

About Shafique Hasan

Check Also

আজ সর্বোচ্চ যত টাকায় বিক্রি হচ্ছে মার্কিন ডলার সহ অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। তাই ব্যবসায়িক লেনদেন সচল রাখতে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *