আইন-আদালত
Hits: 1083
চলমান অভিযানে আটককৃত ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটকে গতকাল মঙ্গলবার তাকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়।তখন তিনি বারবার ঘেমে যাচ্ছিলেন এবং অনেকটা নার্ভাস দেখাচ্ছিল।ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালত শুনানি শেষে অস্ত্র এবং মাদক আইনের পৃথক দুটি মামলায় সম্রাটকে পাঁচ দিন করে মোট ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দিয়েছেন।
এরআগে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সম্রাটকে ঢাকা মহানগর হাকিম শুনানি শেষে তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে হাজির করা হয়। তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ২০ দিনের রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। শুনানিকালে সারাক্ষণই তার হাতে হাতকড়া পরানো ছিল। প্রথমে সম্রাট এবং আরমানকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি হয়। ঢাকা মহানগর হাকিম সারাফুজ্জামান আনছারী তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।এদিন সম্রাটের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। পরে তাকে অস্ত্র মামলায় পাঁচ দিন এবং মাদক মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।
আরো পড়ুন
Error: No articles to display
এসময় তার পক্ষে আদালতের ভেতরে অবস্থান নেন গাজী জিল্লুর রহমান, আব্দুল কাদেরসহ প্রায় ২৫ জন আইনজীবী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে এ সময় রিমান্ড শুনানি করেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান কৌঁসুলি আব্দুল্লাহ আবু, একই আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সাজ্জাদুল হক শিহাব, তাপস পাল ও এপিপি আজাদ রহমান।
সম্রাটের সঙ্গে একই দিনে এই আদালতে তার সহযোগী যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা এনামুল হক আরমানকেও হাজির করা হয়। দেখা গেছে, আদালতে আসার পর এজলাসের এক কোণে সহযোগী আরমানের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিলেন সম্রাট। সেখানে তাকে অনেকটা অসহায় মনে হচ্ছিল। দীর্ঘ ৪৫ মিনিট আদালতের ভেতরে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি।
সম্রাটকে বারবার ঘেমে যেতে দেখে পাশে থাকা একজন তাকে টিস্যু পেপার এগিয়ে দেন। শুনানির মাঝেই একবার নিজের আইনজীবী এবং বেশ কয়েকবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের সঙ্গেও কথা বলেন সম্রাট।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালত শুনানি শেষে রিমান্ডের আদেশ দেন। শুনানিকালে আইনজীবী আফরোজা শাহানাজ পারভীন (হীরা) সম্রাটের জন্য কেঁদে ফেলেন।
আফরোজা শাহানাজ পারভীন (হীরা) বলেন, প্রথমে সম্রাট যুবলীগের রমনা থানা কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। এরপর যুবলীগের ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরে সভাপতি হন। আমি তার কমিটিতে আছি। নেতাকর্মীদের বিপদ-আপদে তিনি ঝাঁপিয়ে পড়েন। কুচক্রী মহল মিথ্যা অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। ৬ অক্টোবর ভোরে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে দুপুর ১টা থেকে দেড়টার দিকে তাকে মাল্টিস্টোর বিল্ডিংয়ে আনা হয়। সেটা তার বাসস্থান না, অফিস। অনেকের সুযোগ আছে আসা-যাওয়ার। তাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র হতে পারে। আমি আর আমার স্বামী সেখানে গিয়েছিলাম। আমার স্বামী আমাকে বলেন, ওই কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা নাকি সেখানে বাজার করে দেয়, চলো, দেখে আসি। সেখানে গিয়ে আমরা দেখি, বাজার করা হয়েছে, রান্না হচ্ছে। আমরা সেখানে গিয়ে খেয়েও এসেছি। আর আমার স্বামী সেখানের ফ্রিজটি খুলে বাজার দেখে অবাক হন। তার পরদিন পুলিশ সেখান থেকে মাদক উদ্ধার করলো। আমরা সরকারি দলে না বিরোধী দল আছি বুঝতেছি না।
তিনি বলেন, অভিযানের ৬ ঘণ্টা পর মিডিয়াকে সেখানে ঢুকতে দেয়া হলো। কিন্তু অন্যান্য অভিযানে মিডিয়া আগে ঢুকলেও এখানে তা হয়নি। ২০ বছর আগ থেকে ভাল্বের সমস্যায় ভুগছেন সম্রাট। তিনি খুবই অসুস্থ। গত ২৪ সেপ্টেম্বর তার ভাল্ব প্রতিস্থাপন করার কথা ছিল। ১০ অক্টোবর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল। তিনি লিভার, হার্টের সমসায় ভুগছেন।
এসব কথা বলার সময় আদালতে কেঁদে ফেলেন আফরোজা শাহানাজ পারভীন (হীরা)।
তিনি বলেন, সম্রাট যদি পালাতে চাইতেন তাহলে যেকোনো মুহূর্তে তা পারতেন। দলকে, নেতাকর্মীদেরকে তিনি ভালবাসেন। জনপ্রিয়তাই তার জন্য কাল হয়েছে। পরিকল্পনা করে তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তার জামিন প্রার্থনা করছি।
এদিকে সম্রাটকে আদালতে আনার খবরে সকাল থেকেই পুরান ঢাকার আদালত পাড়ায় ভিড় করেছেন সম্রাটের কর্মী ও সমর্থকরা। সম্রাটের মুক্তির দাবিতে তারা বিক্ষোভও করেন। সম্রাটের আনাকে কেন্দ্র করে আদালত এলাকার নিরাপত্তা জোরদারও করে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর সম্রাটের নাম আসার পর থেকেই তাকে নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু হয়। অভিযান শুরুর পর হাইপ্রোফাইল কয়েকজন গ্রেফতার হলেও খোঁজ মিলছিল না সম্রাটের। এসবের মধ্যে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়। এরপর ৫ অক্টোবর রাত থেকেই তার গ্রেফতার হওয়ার খবর এলেও পরদিন সকালে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জুশ্রীপুর গ্রামে আত্মগোপনে থাকা সম্রাটকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে আরমানকেও আটক করা হয়। পরে ঢাকায় এনে তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদও করে র্যাব।
৬ অক্টোবর দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে র্যাবের একটি দল কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তালা ভেঙে সম্রাটের কার্যালয়ে ঢুকে অভিযান শুরু করে। নিজ কার্যালয়ে পশুর চামড়া রাখার দায়ে তার ছয় মাসের জেল দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম। উদ্ধার করা হয় এক হাজার পিস ইয়াবা ও সংরক্ষণের আড়াই হাজার জিপার প্যাকেট।
সম্রাটের কক্ষে একটি লাগেজ থেকে ১৯ বোতল মদ, একটি বিদেশি পিস্তল এবং পাঁচ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয়। র্যাব-১-এর ডিএডি আবদুল খালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা করেন।
সম্প্রতি রাজধানীতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র্যাবের হাতে ধরা পড়েন সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া।
এর পর ধরা পড়েন রাজধানীর টেন্ডার কিং আরেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীম। এ দুজনই অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন সম্রাটকে। তারা গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের অবৈধ ক্যাসিনো সাম্রাজ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। প্রকাশ্যে চলে আসে সুন্দর অবয়বের আড়ালে সম্রাটের কুৎসিত জগৎ। এতে করে বেকায়দায় পড়েন সম্রাট।