বাংলাদেশে এখন সব থেকে ঝামেলা সেই সাথে দামি জিনিসের নাম জমি-জমা। মানুষ এখন এই জমি জমা করার পেছনেই সব থেকে বেশি ছোটাছুটি করে থাকে। আর অনেকে এ নিয়ে পড়ে থাকেন নানা ধরনের ঝামেলা আর মামলা মোকদ্দমায়ও। আর এই কারনে বাংলাদেশের আদালতে বিচারাধীন মামলার একটি বড় অংশ হচ্ছে জমি-জমা সংক্রান্ত। দেওয়ানি আদালতে এমনকি ফৌজদারি আদালতে বিচারাধীন মামলার একটি বড় অংশ হচ্ছে জমি-জমা সংক্রান্ত। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মামলার সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া, রাজস্ব বিভাগের অধীনেও জমির বিরোধ নিয়ে অভিযোগ বাড়ছে।

আরো পড়ুন

Error: No articles to display


সাধারণত দেওয়ানি আদালতের মামলাগুলো অনেক সময় দেখা যায় একজনের কেনা জমি অন্য কেউ দখল করে মালিকানা দাবি করছে কিংবা জাল দলিল তৈরি করে জমির দখল নিতে চাচ্ছে। আদালতে মিথ্যা মামলাও ঠুকে দেয়। এর বাইরে রাজস্ব বিভাগে বিশেষ করে এসি ল্যান্ড অফিসে এবং এডিসি রেভিনিউ এর দপ্তরেও জমির নামজারি থেকে উদ্ভূত মিস কেইস বা বিবিধ মামলা হয়ে থাকে।

ফৌজদারি প্রতিকার:
জমি দখলকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা দেখা দিলে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারেন। এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হবে প্রথম শ্রেণীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে। মূলত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বা এডিএম কোর্টে এ মামলা করতে হয়। আর এ মামলা করতে হবে বেদখল হয়ে গেলে কিংবা বেদখল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেওয়ার দুই মাসের মধ্যে। কোনো মামলা করলে ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষের ওপর সমন জারি করবেন। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনবেন এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে সম্পত্তির দখলদারকে তা নির্ধারণ করবেন। প্রয়োজনে সরেজমিনে তদন্তের আদেশ দিতে পারেন পুলিশকে। তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকৃত দখলদার কে, সে বিষয়ে রায় দেবেন। তবে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চাইতে গেলে এখানে স্বত্ব বা মালিকানা দাবি করা যাবে না। এর মাধ্যমে শুধু প্রকৃত দখলদার নির্ণয় করার জন্য প্রতিকার চাওয়া যাবে।

মালিকানা দাবি করবেন যেভাবে:
জমির মালিকানা বা স্বত্ব দাবির জন্য দেওয়ানি আদালতের আশ্রয় নিতে হবে। জমি অবৈধভাবে দখলচ্যুত হলে দখল পুনরুদ্ধারের জন্য ’সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৮ ও ৯ ধারা’ অনুযায়ী প্রতিকার পেতে পারেন। এ আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী জমির মালিক নির্ধারিত পদ্ধতিতে জমিটি পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রতিকার চাইতে পারেন। তবে এ ধারা অনুযায়ী, দখলচ্যুত ব্যক্তিকে জমিতে তাঁর স্বত্ব বা মালিকানা আছে কিংবা মালিকানার দাবি রয়েছে, তার ঘোষণা চাইতে হবে। না হলে এ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার পাওয়া সম্ভব হয় না। ৮ ধারার স্বত্ব প্রমাণসহ মামলা করার ক্ষেত্রে বেদখল হওয়ার পর থেকে ১২ বছরের মধ্যে মামলা করার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের মামলাকে সাধারণত স্বত্ব সাব্যস্ত খাস দখলের মামলা বলা হয়।

সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৯ ধারা অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে হলে মালিকানা প্রমাণের দরকার নেই। শুধু জমি থেকে দখলচ্যুত হয়েছেন এটি প্রমাণ করলেই চলবে। ৯ ধারায় উল্লেখ আছে, যদি কোনো ব্যক্তি বেদখল হন, তবে তিনি বা তাঁর মাধ্যমে দাবিদার কোনো ব্যক্তি মোকদ্দমার মাধ্যমে এর দখল পুনরুদ্ধার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যেসব দিক বিবেচনা করা হয়, সেগুলো হলো—বাদী অর্থাৎ যিনি প্রতিকার দাবি করেছেন, তিনি জমিটি দখল করে আসছিলেন কি না; বিবাদী তাঁকে জোরপূর্বক বেদখল করেছেন কি না; বিবাদী বেআইনিভাবে জমিতে প্রবেশ করেছেন কি না।

তবে বাদীকে অবশ্যই বেদখল হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে মামলা করতে হবে। অন্যথায় এ ধারায় মামলা করার অধিকার হারাতে হবে তাঁকে। তবে সরকারের বিরুদ্ধে এ ধারায় প্রতিকার চাওয়া যাবে না।

কোথায় ও কীভাবে আইনের আশ্রয় নেবেন:
জমিজমার মালিকানা নিয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট এখতিয়ারাধীন দেওয়ানি আদালতে মামলা করতে হবে। মামলার মূল্যমান চার লাখ টাকার কম হলে সহকারী জজ আদালতে এবং চার লাখের বেশি হলে অসীম এখতিয়ার পর্যন্ত যুগ্ম জেলা জজ আদালতে প্রতিকার চাইতে হবে। মামলা দায়ের করতে হবে আইনজীবীর মাধ্যমে। মালিকানাসহ দখলের প্রতিকার চাইলে জমির মূল্য বাবদ অ্যাড-ভ্যালোরেম (মূল্যানুপাতে) কোর্ট ফি দিতে হবে। ৯ ধারা অনুযায়ী শুধু দখলের জন্য প্রতিকার চাইলে সম্পত্তির মূল্য অনুসারে যে কোর্ট ফি তার অর্ধেক, অর্থাৎ অ্যাড-ভ্যালোরেম কোর্ট ফির অর্ধেক পরিমাণ কোর্ট ফি দিতে হবে। জমির মালিকানাসহ দখল কিংবা শুধু দখল চেয়ে প্রতিকারের ক্ষেত্রে যদি বাদী মনে করেন, তাঁর জমিটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে, তাহলে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাইতে পারেন পৃথক আবেদনের মাধ্যমে।

এছাড়া, জমির রেকর্ড নিয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করে প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে।

রাজস্ব বিভাগের প্রতিকার:
এসি ল্যান্ড অফিসে বিভিন্ন সময় দেখা যায় ওয়ারিশানদের মধ্যে বা ভিন্ন দু’পক্ষের মধ্যে জমির নামজারি নিয়ে মিস কেইস চালু হয়। এক্ষেত্রে, এসি ল্যান্ড তদন্ত সাপেক্ষে এবং রেকর্ডপত্র যাচাই করে নামজারি আদেশ রিভিউ করে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ন আইন, ১৯৫০ এর ১৫০ ধারা মতে এসি ল্যান্ড যে কোনো স্বার্থ সংশ্লিষ্ট পক্ষের আবেদনক্রমে অথবা স্ব-উদ্যোগে তাহার নিজের প্রদত্ত অথবা তাহার পূর্ববর্তী কর্মকর্তা কর্তৃক এই আইনের এই অংশের অধীনে পেশকৃত যে কোনো আদেশ রিভিউ করতে পারেন এবং এইরূপ কোনো আদেশ রিভিউ করতে গিয়ে এইরূপ আদেশকে পরিবর্তন, খণ্ডন বা বহাল রাখতে পারেন।

তবে শর্ত থাকে যে, (ক) এইরূপ আদেশের তারিখ হইতে ত্রিশ দিনের মধ্যে একটি আদেশের রিভিউর জন্য আবেদন করা না হলে অথবা যখন এইরূপ আবেদন ত্রিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর দাখিল করা হয় তখন উক্ত সময়ের মধ্যে আবেদন না করার যথেষ্ট কারণ ছিল রাজস্ব কর্মকর্তাকে আবেদনকারী সন্তুষ্ট না করতে পারলে গ্রহণ করা যাবে না;

(খ) যদি এইরূপ আদেশের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করা হয়ে থাকে অথবা উর্ধ্বতন রাজস্ব কর্তৃপক্ষের নিকট এইরূপ আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশনের আবেদন করা হয়ে থাকে, তাহা হলে আদেশ রিভিউ গ্রহণ করা যাবে না; এবং
(গ) উক্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষদেরকে শুনানী করার জন্য হাজির হওইয়ার জন্য যুক্তিসংগত নোটিশ না দেওয়া পর্যন্ত রিভিউতে একটি আদেশ সংশোধন বা পরিবর্তন করা যাবে না ।

উপধারা-(২) রিভিউ এর আবেদন নাকচ করে অথবা রিভিউতে পূর্ববর্তী কোনো আদেশ বহাল রেখে আদেশ দেওয়া হইলে তার বিরুদ্ধ কোনো আপিল চলবে না ।
এসি ল্যান্ড এর আদেশের বিরুদ্ধে এডিসি রেভিনিউ এর কাছে রিভিশন চাওয়া যাবে।

তবে মনে রাখতে হবে জমির মামলা নিয়েও যেকোন ব্যক্তি অধস্তন আদালত বা বিভাগে প্রতিকার না পেলে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এবং আপিল বিভাগেও যেতে পারবেন।


বাংলাদেশে এই জমি জমা নিয়ে প্রতিনিয়তই ঘটে থাকে নানা ধরনের ঘটনা। জমি-জমার বিষয় নিয়ে ঘটে থাকে অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনাও। তাই উপরোক্ত দেয়া সব পরামর্শ গুলো পাঠকদের জন্য হতে পারে এ সব সমস্যা এড়ানোর উপয়াও।

News Page Below Ad

আরো পড়ুন

Error: No articles to display